ঠিক কোন অপরাধে শাস্তি পাচ্ছি, প্রশ্ন রাব্বানীর
অভিযোগ খণ্ডনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ চেয়েছেন ছাত্রলীগের অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেছেন, ‘ফাঁসির আসামিও তো শেষ ইচ্ছা প্রকাশের সুযোগ পায়! অথচ এখনো জানতে পারলাম না, ঠিক কোন অপরাধে শাস্তি পাচ্ছি, প্রাণপ্রিয় নেত্রীর স্নেহছায়া বঞ্চিত হচ্ছি!’
গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এসব কথা লিখেন।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার সব কথা আমি ফেসবুকেই বলেছি। কিছু প্রশ্নও রেখেছি। দোষী হলে গ্রেপ্তার করে জেলে দিক, নতুবা দায়মুক্তি দেওয়ার কথাও সেখানে বলেছি।’
গোলাম রাব্বানীর ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু নিচে দেওয়া হলো :
“সঙ্গত কারণেই বিষয়গুলো পরিষ্কার করার প্রয়োজন অনুভব করছি...
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, সন্ধ্যায় আমাদের (আমি ও শোভন) ডাকা হলো। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন অগ্রজ উপস্থিত ছিলেন। (বাহাউদ্দিন নাসিম ভাই ছিলেন না)। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেত্রী অসন্তুষ্ট, আমাদের পদত্যাগপত্র লিখতে বলা হলো।
আমি বললাম, শুধু পদ নয়, আপার জন্য জান হাজির! নেত্রী চাইলে আমরা এই মুহুর্তে পদত্যাগ করবো। তবে আমরা নেত্রীর সাথে দেখা করে ২ মিনিট কথা বলার সুযোগ চাই। যে সকল অভিযোগ মিডিয়া ও বিভিন্ন মারফতে শুনছি, সেগুলো অতিরঞ্জিত, অধিকাংশই ভিত্তিহীন ও মনগড়া। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকু আমাদের অবশ্যই প্রাপ্য।
তাঁরা বললেন, তোমাদের বক্তব্য চিঠি আকারে লিখে দাও, আমরা আপাকে দেখাবো। আর আপা এখন দেখা করবেন না। আগে পদত্যাগপত্র জমা দাও, আমরা কথা বলে দ্রুতই দেখা করার ব্যবস্থা করে দেবো। প্রাণপ্রিয় নেত্রীর কথা বললে তো যেকোনো আদেশই শিরোধার্য!
আমরা বুকে কষ্টের পাথর বেঁধে, লিখলাম.... প্রাণপ্রিয় নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে ছাত্রলীগ করতে চাইনা...
.... এতটা দিন পেরিয়ে গেলো, শ্রদ্ধেয় অগ্রজগণ আর আপার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিলেন না, আমরাও আনীত অভিযোগ খণ্ডনের সুযোগ পেলাম না। ফাঁসির আসামীও তো শেষ ইচ্ছে প্রকাশের সুযোগ পায়! অথচ, এখনো জানতে পারলাম নাহ, ঠিক কোন অপরাধে শাস্তি পাচ্ছি, প্রাণপ্রিয় নেত্রীর স্নেহছায়া বঞ্চিত হচ্ছি!
(ইস্যুটা যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়, তাহলে কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই!
-- এত আলোচনা-সমালোচনা, আন্দোলন, লেখালিখি, তথ্যপ্রমাণ দাখিলের পরেও কেন আজ পর্যন্ত একটা তদন্ত কমিটি হলো না?
-- শিক্ষার্থীরা ভিসি ম্যামের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে, দিন-তারিখ উল্লেখপূর্বক প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির পরও কেন সেই টাকার উৎস খোঁজা হলো না?
-- মিডিয়াতে ম্যাম বললেন, শোভন-রাব্বানীর সাথে টাকা-পয়সা নিয়ে কোন কথা হয়নি, তাহলে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ করলেন কিসের ভিত্তিতে? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে??
-- শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির জবাবে ম্যাম বলেছেন, আগস্টের ০৯ ও ১০ তারিখ তার সাথে ঐ শিক্ষার্থীর কোন কথাই হয়নি। অথচ ম্যামের কল লিস্ট হিস্ট্রি বলছে, দুইদিনে সেই শিক্ষার্থীর সাথে ম্যামের ০৬ বার কথা হয়েছে! ঐ শিক্ষার্থী কিন্তু মিডিয়াতে স্পষ্ট বলেছে, কথোপকথনের রেকর্ডিং বের করলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
## ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আমাদের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা, শ্রদ্ধেয় জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের ধানমন্ডির অফিসে আমার আর শোভনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ভাই বললেন, ‘তোমাদের দোষ নেই, ভিসি ম্যাডাম যে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কাজ দিয়েছেন, সেটা আমি জানি। যারা কাজ পেয়েছে, তার মধ্যে একজন ঠিকাদার আমার পরিচিত, সম্পর্কে ভাগ্নে হয়। ও নিজেই আমাকে টাকার বিনিময়ে কাজ পাবার কথা বলেছে।’
এই তথ্যটা কি ভাই তখন আপাকে জানিয়েছিলেন? সম্ভবত না। কারণ, অপরাধী জানলে আপা কাউকেই ছাড় দেন নাহ, সে যত আপন হোক না কেন, এটা আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি!
সুতরাং, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে, কে আসল চাঁদাবাজ??!!)
প্রাণপ্রিয় নেত্রী, আপনি আশা-ভরসা আর আস্থার শেষ ঠিকানা। একবার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিন, ঠিক জানতে পারবেন, আপনার শোভন-রাব্বানী এমন কোন অন্যায় করেনি, যাতে এভাবে কষ্ট পাবে, নিগৃহীত হবে!!
কোন মিডিয়া ট্রায়ালে আর কারো সাজা না হোক। সকল বিষয়ে সঠিক তদন্ত হোক। আমাদের বক্তব্য শোনা হোক।
দোষী হলে গ্রেপ্তার করে জেলে দিন, না হলে দায়মুক্তি দিন!