ডিজিটাল কৃষি ও গ্রামীণ অবকাঠামোতে বিনিয়োগের আহ্বান
ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেটভিত্তিক গ্রামীণ অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত শনিবার ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অধিকতর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রাথমিক উৎপাদন এবং অ্যাগ্রো প্রসেসিংয়ের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আর এটি সম্ভব গ্রামীণ পর্যায়ে সামাজিক, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে।
‘পোস্ট কোভিড-১৯ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ইন অ্যাগ্রো-বেজড্ ইন্ড্রাস্টি’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার আয়োজন করে ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টি (সিসিআইএফবি) এবং বাংলাদেশ ইনভেসমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস করোনা পরবর্তী দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অ্যাগ্রোভিত্তিক উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ও কৃষি উদ্যোক্তা পর্যায়ে এসএমই ঋণের চাহিদা পূরণে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম উল্লেখযোগ্য। লাইভস্টক এবং অ্যাকুয়াকালচারসহ সব অ্যাগ্রোভিত্তিক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ সরকারের এই স্ক্রিমের অধীনে পড়বে।’
মুখ্য সচিব তাঁর বক্তব্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানিতে কৃষির অবদান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আরো একটি বিশেষ প্রকল্প অনুমোদনের কথা জানান। এর ফলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত আরো শক্তিশালী হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মুখ্য সচিব আরো বলেন, ‘গবেষণা এবং উন্নতি (আরঅ্যান্ডডি) এবং অ্যাগ্রোভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগসহ যেকোনো বিদেশি সহযোগিতাকে স্বাগতম জানাই।’ তিনি বাংলাদেশ-ফ্রান্সের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর জোর দেন।
স্বাগত বক্তব্যে সিসিআইএফবির সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, আয় এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ১৩ ভাগ। কর্মসংস্থানে এর ৪০ ভাগ অবদান থাকলেও এটা আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতাকে নির্দেশ করে।’
সিসিআইএফবির সভাপতি আরো বলেন, ‘করোনা শহরের কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ এবং গ্রামে ফিরে আসা প্রবাসীদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই দুর্যোগের সময়ে আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে কৃষি। মহামারি রূপে করোনা আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা খাদ্য ও জীবিকার জন্য কৃষির দ্বারস্থ হয়েছি। সরকারি, বেসরকারি এবং খাত সংশ্লিষ্টদের একত্রে কাজ করতে হবে। এতে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, কৃষি সার্বিক অর্থনীতির চালিকাশক্তি হবে।’
আলোচকরা কৃষিতে ভারসাম্যপূর্ণ কর্মসংস্থানের জন্য কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
১. কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানবসম্পদের জন্য ডিপ্লোমা এবং ভোকেশনাল শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে।
২. পাঠ্যপুস্তকে প্রায়োগিক কৃষি শিক্ষা ওপর আরো বেশি নজর দিতে হবে।
৩. ইন্টার্নশিপ ও আইডিয়া কম্পিটিশন চালু, উদ্ভাবনের জন্য ইনকিউবেশন এবং স্টার্ট-আপ প্রোগাম চালুর মতো আরো কিছু বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড স্ক্রিল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইএসডিপি) ডিরেক্টর এ কে এম হাফিজুল্লাহ খান ইএসডিপি প্রজেক্টের অধীনে কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে গৃহীত নানামুখি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি এই প্রজেক্টের অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবেন বলে জানান। উদ্দেশ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার শেষে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৪ ভাগে উন্নীত করা।
প্রফেসর এমিরেটস ড. সাত্তার মণ্ডলের নেতৃত্বে ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য দেন এসিআই এগ্রি বিজনেসেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও ড. এফএইচ আনসারি, প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, ইস্পাহানি অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক ফাউজিয়া ইয়াসমিন, সাবেক বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরামর্শক এবং কার্নেল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ ইনফরমেশন অফিসার (সিআইও) ড. আসিফ নাঈমুর রশিদ, শেপিং ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স ট্রান্সফরমেশনের (শিফট) কান্ট্রি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. আশরাফুল আলম, বিজনেস ফ্রান্স ফর সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর এরিক ফাজোলে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাবেক উপদেষ্টা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মাহফুজউদ্দিন আহমেদ।
সমাপনী বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম অ্যাগ্রোভিত্তিক শিল্পে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সিরাজুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে পলিসি ডায়লগ আয়োজন, কার্যবিধি প্রণয়ন এবং সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অ্যাগ্রো-ইন্ড্রাস্টিয়াল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এই শিল্পের আরো বিকাশ ঘটবে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং বিডার সমন্বয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা অ্যাগ্রোভিত্তিক উৎপাদন, প্রসেসিং, ভ্যালু এডিশন এবং মার্কেটিংয়ের উৎকৃষ্ট সাধনে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানের শেষে সিসিআইএফবির পলিসি ও অ্যাডভোকেসি সাবকমিটির চেয়ারম্যান শাহ সৈয়দ কামাল সবাইকে ধন্যবাদ জানান।