ডেসটিনির এমডি রফিকুলের জামিনের রিভিউ খারিজ

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্টের ফাইল ছবি

অর্থ পাচারের দুই মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের রিভিউ খারিজ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। 

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে রিভিউ খারিজের এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রফিকুল আমীনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমদ। আর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে রফিকুল আমীনের আইনজীবী সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, যে গাছ বিক্রি করে টাকাটা দিতে চেয়েছিলাম, সে গাছ আর পাইনি। আর, আইনে এ অপরাধে যতটুকু সাজা, সে মেয়াদের সাজা এরই মধ্যে খাটা হয়েছে।’

আজকের আদেশের বিষয়ে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনো শর্তই সে পূরণ করতে পারেনি। পরবর্তীকালে আপিল বিভাগ তার জামিন আবেদন খারিজ করেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে পরে রিভিউ করলে, আপিল বিভাগ আজ তা খারিজ করে দিয়েছেন।’

‘এর ফলে তার জামিন আবেদ খারিজের আদেশই বহাল থাকল। আর, টাকা ফেরত দিতে তার শর্ত-সংক্রান্ত যে আদেশ ছিল, সেটাও বহাল থাকল। সর্বোপরি, পূর্বের শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত তার কারামুক্তি মিলছে না’, যোগ করেন খুরশীদ আলম।

২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুটি মামলা করে। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ১৯ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ৪৬ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যার মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। আর, মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে আট লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

পরবর্তীকালে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে দুই মামলায় আসামিদের বিচার শুরু করেন। তবে, অভিযোগ গঠন হওয়ার আগেই ট্রি প্ল‌্যান্টেশনের অর্থ আত্মসাতের মামলায় পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান রফিকুল আমীন। কিন্তু, দুদক হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে, সে জামিন স্থগিত হয়ে যায়।

তবে, পরবর্তীকালে দুদকের আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে রফিকুল আমীনকে জামিন দেন। যেখানে শর্ত দেওয়া হয়—ছয় সপ্তাহের মধ্যে ট্রি প্ল‌্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা অন‌্য কোনোভাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু, শর্তই পূরণ করতে না পারায় ডেসটিনির ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন আটকে যায় এবং তাঁকে কারাগারেই থাকতে হয়।

এর পরেও হাইকোর্টে কয়েক দফা জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হন রফিকুল আমীন। একপর্যায়ে অর্থ পাচারের দুই মামলায় রফিকুল আমীনের জামিন আবেদন হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে ছয় মাসের মধ্যে মামলা দুটি নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন।

পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করলে রফিকুল আমীনের আবদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। অবশেষে সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করলে, তা আজ খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।