ঢাকাগামী বিআরটিসি বাস থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে দিলো ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপ

Looks like you've blocked notifications!
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস মালিক সমিতির আটকে দেওয়া বোয়ালমারী থেকে ঢাকাগামী বিআরটিসির বাসটি। ছবি : এনটিভি

ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে ছেড়ে যাওয়া পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী বিআরটিসি বাসের যাত্রীদের ভাঙ্গা হতে নামিয়ে দিয়ে বোয়ালমারী-ঢাকা রুটে শুরু হওয়া বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপ বুধবার সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটায়।

এ সময় বাসের স্টাফ ও চালককে মারধরের হুমকি এবং যাত্রীদের সাথে অসদাচরণ করা হয়। এর ফলে চালু না হতেই বন্ধ করে দেওয়া হলো বোয়ালমারী-ঢাকা রুটের বিআরটিসি বাস চলাচল। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্য ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোয়ালমারী পৌর বাস টার্মিনালের বিআরটিসি কাউন্টার হতে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার ট্রিপের একটি বাস সকাল ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৪২ সিটের বাসটির সব আসন পূর্ণ ছিল।

ওই বাসের স্টাফ তারিকুল ইসলাম বলেন, বোয়ালমারী থেকে ছেড়ে সকাল ৮টার দিকে তাদের বাসটি ভাঙ্গা পৌরসভার সামনে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশের আগমুহূর্তে তাদের গতিরোধ করা হয়। ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় এক দেড়শ লোক মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে তাদের বাসটি থামিয়ে দেয়। এরপর তারা বাসের চালক রাকিবুল ইসলামের ওপর চড়াও হয়ে মারতে উদ্যত হয় এবং বাস চালকের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও হুমকি দেওয়া হয়। এসময় যাত্রীদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

তারিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে তাদের ভাড়ার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আমরা ঢাকার দিকে চলে আসতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। বোয়ালমারী ফিরে আসতে চাইলেও দেওয়া হয়নি। পরে বাস ড্রাইভার বলেন যে, তার বাড়ি মাগুরা। তিনি বাস নিয়ে মাগুরা ফিরে যেতে চান। পরে মাগুরা যাওয়ার শর্তে তাদের সেখান থেকে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।

‘ফের এই পথে বাস চালালে হাত-পা কেটে দিবো, এই হুমকি দিয়ে তারা আমাদের বাসটি ছেড়ে দেয়’ বলেন বিআরটিসি বাসের স্টাফ তারিকুল। এরপর তারা বাস নিয়ে মাগুরা যাওয়ার কথা বলে বোয়ালমারী চলে আসেন। ভাঙ্গা থেকে ফিরে বাসগুলো বোয়ালমারী এসে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার বোয়ালমারী ছেড়ে যায়।

বিআরটিসি বাস বন্ধ করে দেওয়ার খবর বোয়ালমারীতে পৌঁছালে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, কোনপ্রকার আলোচনা ছাড়াই বোয়ালমারী থেকে বিআরটিসি বাসটি চলাচল শুরু করে। এ কারণে ভাঙ্গা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে ওই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনও জানে। কিন্তু এরপর বোয়ালমারীর কিছু ছেলেপেলে আমাদের লোকাল বাস চলাচলে ডিস্টার্ব করছে।

তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলের যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে কোন উপজেলাভিত্তিক বাস চলাচলের অনুমতি নেই। আর ফরিদপুরে বিআরটিসির কোনো ডিপো নেই৷ এরা কুমিল্লা ডিপোর বাস এনে ওই ডিপোর ম্যানেজারের নামে লিজ নিয়ে বাস চালাচ্ছিল। এতে আমাদের বাস মালিক গ্রুপের বাস চলাচলে সমস্যা হবে। আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। এ কারণে আমরা বাসের স্টাফদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড রেখে তাদের যাত্রী নামিয়ে বাসগুলো ফিরিয়ে দেই। তবে কারও সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়নি এবং কাউকে হুমকিও দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ ধরনের একটা খবর জানতে পেরেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি। এ ব্যাপারে বিআরটিসি বাসের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মাত্র একদিন আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে বোয়ালমারী-ঢাকা বিআরটিসি বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য  আব্দুর রহমান।

প্রথম দিনে বিআরটিসির এই এসি বাসে যাত্রী ছিল পরিপূর্ণ। যাত্রীরা জানান, বাস মালিক গ্রুপের নরমাল পরিবহণে পাঁচশ টাকা ভাড়া নিত। সেখানে বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া সাড়ে পাঁচশ। এতে যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। ফলে প্রথম দিনেই বাসগুলো যাত্রী বোঝাই হয়ে যায়।