ঢাকায় চিকিৎসকদের করোনা সংক্রমণ কমছে
দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ শুরুর পর ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে সব পেশা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। বাড়তে থাকে আক্রান্ত, আতঙ্ক ও মৃত্যু। এ মরণব্যাধি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হতে থাকে চিকিৎসক এবং এ পেশার সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সর্বপ্রথম সিলেটের চিকিৎসক ডা. মো. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে লম্বা হতে থাকে এ পেশায় জড়িতদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা। তবে বর্তমানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে ঢাকার চিকিৎসকদের মধ্যে এ প্রকোপ কমে আসছে।
রাজধানীর তিনটি বড় সরকারি হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এসব হাসপাতালের পরিচালকদের দাবি, করোনা সংক্রমণের শুরুর সময়কালের চেয়ে বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হওয়া, চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মানুষের ভেতরে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের মধ্যে আক্রান্ত কমে আসছে। তাঁদের তিনজনই দাবি করেছেন, রাজধানী ঢাকায় করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করলেও বাড়তে শুরু করেছে দেশের অন্য জেলাগুলোতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালে গত ৭ মে পর্যন্ত ১৭৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু গতকাল ১৭ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, ওই দুই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী মিলে বর্তমানে মোট ৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত আছেন।
এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীসহ মোট পর্যন্ত ৩৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত আছেন।
তিন হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনও বলেছে, রাজধানীতে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমণের হার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এখনো পর্যন্ত প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অন্তত ২০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মে মাসের মধ্য পর্যায়ে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হতেন।
জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে ৯০ থেকে ১০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এখন এ প্রকোপটা কমে গেছে। বর্তমানে আমাদের এখানে ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন। এদের ভেতরে চিকিৎসক পাঁচজন, নার্স ছয়জন ও সাতজন কর্মচারী।’
ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘এখন মানুষ সচেতন হয়েছেন। করোনার উপসর্গ থাকলে তা গোপন করেন না। এখন আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভসের সরবরাহ আছে। এ ছাড়া এখন সব আলাদা আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। হাসপাতালের নিচ থেকে কোন রোগী কোন ইউনিটে যাবে তা ঠিক করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকরা এখন বেশ সচেতনতার সঙ্গে কাজ করেন। এ ছাড়া আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, ঢাকায় করোনার সংক্রমণ কমে গেছে। কিন্তু ইদানীং ঢাকার বাইরে করোনা সংক্রমণের হার নিয়মিত ধারায় বাড়ছে। কোরবানি ঈদের পর আরেকটি বড় করোনার ধাক্কা আসতে পারে দেশে।’
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার হাসপাতালে এই পর্যন্ত মোট ২৪৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের ভেতরে সুস্থ হয়েছেন ২২৭ জন। বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসক, সাতজন নার্স ও পাঁচজন কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।’
আক্রান্ত কমার কারণ জানতে চাইলে কাজী মো. রশিদ-উন-নবী বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। আমরা অতিমাত্রায় সতর্ক হয়েছি। আমার মনে হচ্ছে ঢাকায় সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। আগে একদিনে আমার হাসপাতালে ২৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি। কিন্তু গতকাল এই সংখ্যা ছিল ১০৮ জন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে এখনো পর্যন্ত ৩৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন করোনায় আক্রান্ত আছেন ১৩ জন। তবে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও আরো ১০ জন আনসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমার মনে হয়, ঢাকায় করোনায় আক্রান্তের হার কমে গেছে। হাসপাতালে করোনা রোগীও কমে গেছে। আগে ঢাকা মেডিকেলে ৭০০ করোনা রোগী ভর্তি ছিল। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা ৫০০-এর নিচে নেমে এসেছে। এ ছাড়া আগের চেয়ে এখন ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যাও কমে গেছে।’
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল বলেন, ‘প্রথম দিকে ঢাকার হাসপাতালগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন করে চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এখন ঢাকায় সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তবে সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ২০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের ভেতরে বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের চিকিৎসক। এখনো পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ৭০০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮৪ জন।’