ঢাকায় পানির বিল অন্যায়ভাবে বাড়ানো হয়েছে : সোহেল
ঢাকা ওয়াসার পানির আরেক নাম মরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, পানির বিল অন্যায়ভাবে বাড়ানো হয়েছে।
পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার ওয়াসায় স্মারকলিপি দেওয়ার আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রগতি ভবনের নিচে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সোহেল এ মন্তব্য করেন।
পরে সোহেলের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে ওয়াসাকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওয়াসার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সংস্থাটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মী মো. মাকসুদুল হক।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে মাকসুদুল হক জানান, স্মারকলিপিটি তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন।
এর আগে সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, পানির বিল অন্যায়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। গত ১৩ বছরে ১৪ বার ওয়াসা পানির বিল বাড়িয়েছে। এই পানির বিল ছিল ৬ টাকা ৪ পয়সা। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক হাজার লিটার পানির বিল হবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সোহেল বলেন, এই ওয়াসার পানির মান সম্পর্কে আপনারা জানেন। পানির অপর নাম জীবন। আর ওয়াসার পানির অপর নাম মরণ।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি যদি একদিনের জন্য ওয়াসার এক গ্লাস পানি খান, খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আপনি যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হন, তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।
ওয়াসা এখন একজন এমডির কথা মতো চলে মন্তব্য করে হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, দিন যায় রাত আসে, গ্রীষ্ম যায় বর্ষা আসে। সব পরিবর্তন হয়। কিন্তু ওয়াসার এমডি পদে যিনি আছেন, তার কোনও পরিবর্তন নেই!
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ করে সোহেল বলেন, এই ঢাকায় ময়লা পানির যিনি কারিগর, তার বেতন ২০ হাজার না, এক লাখ না, দুই লাখ না, তিন লাখ না, চার লাখ না- তার বেতন ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা! আর এই করোনা মহামারিতে ঢাকাবাসীর পাশে না দাঁড়িয়ে ওয়াসার এমডি মার্কিন মুলুকে বসে রিমোট কন্ট্রোল উনি ওয়াসা চালাচ্ছেন।
‘ওয়াসার এমডিকে বুড়িগঙ্গার পানি খাইয়ে ছাড়ব’ বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সোহেল।
সমাবেশ চলাকালে মহানগর বিএনপির ছয় থেকে সাতজন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তবে স্মারকলিপি প্রদান শেষে পুলিশকে কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান সোহেল। পরে পুলিশ নগর বিএনপির কর্মীদের ছেড়ে দেয়।
স্মারকলিপিতে পানির দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও গণবিরোধী উল্লেখ করে বলা হয়, নিরবচ্ছিন্নভাবে সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। বারবার অযৌক্তিকভাবে পানির দাম বৃদ্ধি করা সরকারের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নগরবাসীর জন্য সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারেনি।
অবিলম্বে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে নগরবাসীর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জোর দাবি জানানো হয়।
এদিকে ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে লেখা বিভিন্ন ফেস্টুন নিয়ে নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। এতে লেখা ছিল, ‘করোনায় মানুষ মরে, এমডির বেতন বাড়ে’, ‘পানির জন্য হাহাকার, ওয়াসা নির্বিকার’, ‘ন্যায্য মূল্যে পানি দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও’, ‘ওয়াসার যাঁতাকলে ঢাকাবাসী গুমরে মরে’, ‘অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি মানি না, বাতিল করো’ প্রমুখ।
এ সময় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়াল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।