ঢাবি কর্মকর্তা শারমিনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নকল মাস্ক সরবরাহের মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন জাহানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলামের আদালত তাঁর এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শারমিন জাহানকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শারমিন জাহানকে শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেছিলেন, ‘শারমিন জাহানকে গ্রেপ্তারের পর শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এর আগে নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোজাফফর আহমেদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল গত ২৭ জুন বিএসএমএমইউতে ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।
এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
মামলা ও নোটিশ
মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর ডা. অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। মামলার আসামি করা হয়েছে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহানকে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় আমরা অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম। তারা যে কারণ দেখিয়ে উত্তর দেখিয়েছিল, তা সন্তোষজনক নয়। সে জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।’
এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারের আগে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি মাস্ক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নই, আমার কাজ সরবরাহ করা। আমি চারটি ধাপে মাস্ক সরবরাহ করেছিলাম। কিন্তু তৃতীয় দফার মাস্ক নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। চতুর্থ দফার মাস্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠল না। আমার কথা হচ্ছে, আমি গত ১২ জুলাই হাসপাতালের একজন হিসাব কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলামের কাছে মাস্কগুলো হস্তান্তর করি। তখন কিন্তু তারা প্রশ্ন তুলেনি, তুলেছে অনেক পরে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমি তাদের অগোচরে মাস্ক সরবরাহ করেছি। কিন্তু তা সঠিক নয়। তারা আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ১৮ জুলাই। আমি কারণ দর্শানোর নোটিশের পক্ষে জবাব দিয়েছিলাম ২০ জুলাই। তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমেই মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।’
শারমিন জাহানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ‘গত ২৭ জুন বিএসএমএমইউয়ের কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটিরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক সরবরাহের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। উক্ত মাস্ক সরবরাহের জন্য আপনাকে স্পষ্ট করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকদের জীবন রক্ষাকারী নির্ধারিত মাস্ক সরবরাহ না করে নিম্নমানের মাস্ক কর্তৃপক্ষের অগোচরে সরবরাহ করেছেন, যা চিকিৎসক ও নার্সগণের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।’
‘আপনার এই ধরনের অনৈতিক ও অসংগতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, তা এই পত্র জারির দুই কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী (হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ) বরাবর উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো’, যোগ করা হয় কারণ দর্শানোর নোটিশে।
শোকজের জবাবে শারমিন জাহান লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, “আপনার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ অনুযায়ী শর্তাদি পূরণ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল চারটি ধাপে মোট তিন হাজার ৬০ পিস এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। এর মধ্যে তৃতীয় সরবরাহকৃত এক হাজার পিস মাস্ক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে। যদিও ‘ডাইজেন ইন্টারন্যাশনাল’ কর্তৃক কোনোরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এক হাজার পিস মাস্কের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তদুপরি গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা বিবেচনা করে ৯৫৯টি মাস্ক ফেরত নিয়ে আসি। নীতিগত কারণেই তৃতীয় ধাপ সরবরাহের বিপরীতে কোনো অর্থ গ্রহণ করা হয়নি।”
জবাবে শারমিন জাহান আরো বলেছিলেন, ‘মাস্ক সরবরাহকালে আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন হিসাব কর্মকর্তা ও একজন সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা যাচাই সাপেক্ষেই মাস্কগুলো গ্রহণ করে। তাই কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাস্ক সরবরাহের কোনো অবকাশ ছিল না। এ ক্ষেত্রে ‘অনৈতিক’ কিছু সংগঠিত হওয়ার বিষয়টিও অপ্রাসঙ্গিক। তবু অত্র প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত এন-৯৫ মাস্ককে ঘিরে গ্রাহক অসন্তুষ্টির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’