ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যু : স্বামী তিন দিনের রিমান্ডে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৪) মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী ইফতেখার আবেদীনের (৩৬) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম ইফতেখার আবেদীনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ।
আজ বুধবার বিকেলে বনানী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন এ তথ্য জানান।
ঢাকা মহানগরে পুলিশের (ডিএমপি) বনানী থানায় ইলমা চৌধুরীর বাবার করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ইফতেখারের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বাদী হয়ে করা মামলায় এলমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়।
এদিকে, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইলমা চৌধুরী মেঘলার মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যা বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামীম বানুসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং এলমার সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী, আমাদের মেয়ে ইলমার স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না, স্বাভাবিক হলে শরীরে এত দাগ হবে কেন? হাসপাতালে যাওয়ার পর তাঁর এই দৃশ্যটা দেখে আমি মানতে পারছি না। তাঁর স্বামীকে দেখেও মনে হয়েছে অস্বাভাবিক এবং কথাবার্তা খুবই অসংলগ্ন। আমার বিভাগের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
রেজওয়ানা চৌধুরী আরও বলেন, ‘তাঁর (ইলমা চৌধুরী) কত সুন্দর স্বপ্ন, সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিল। একটা ভুল সিদ্ধান্ত তাঁকে জীবন দিতে হলো। এ ঘটনার বিচার হলেও তাঁর জীবন তো আর ফিরবে না। তোমরা জীবনের সিদ্ধান্ত ভেবে-চিন্তে নিও। এলমা নিজের প্রাণ দিয়ে তোমাদের একটা শিক্ষা দিয়ে গেল।’
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ইলমার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ইলমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুধু মর্মান্তিক নয়, নৃশংসও বটে। আমরা এর দ্রুত বিচার দাবি করছি। কেননা, আমাদের দেশে বিচার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়। ইলমার স্বামী প্রভাবশালী বলে আমরা জেনেছি। অনেক সময় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয় না। তবে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত বিভাগটি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন এই প্রত্যাশা রাখি।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এটি স্পষ্ট একটি হত্যা। ইলমার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাঁকে মানসিকভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে। এটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা একটি সুস্থ এবং দ্রুত তদন্তের দাবি রাখি। এই হত্যাকারীরা সমাজের দুর্বৃত্ত। এরা সাধু সাজার চেষ্টা করে। এই ধরনের অপমৃত্যু বন্ধ হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলমার পরিবারের পাশে আছে।’
ইলমার সহপাঠী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইলমা খুবই বন্ধুসুলভ ছিল৷ রক্ষণশীল এক প্রবাসী ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হয়ে ঘরোয়াভাবে তার বিয়ে হয়৷ বিয়ের পর আমরা দেখতে পাই সে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে কেমন দূরে সরে যায়৷ আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে তাঁর স্বামী বাধা দিত৷ সে ঘর হতে বের হতে পারত না৷ বাহির হলেও তার সঙ্গে একজন গার্ড দিয়ে রাখত এবং সে কোথায় কি করছে সব কিছু তার স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে তদারকি করতেন৷’
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান ইলমা। তাঁর শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানা পুলিশও। যদিও এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ইলমার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, তাঁর মা শিরিন আমিন ও ইফতেখারের পালক বাবা মো. আমিনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার ইলমার স্বামী ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইলমার স্বামী ইফতেখার কানাডাপ্রবাসী। তিনি গত রোববার ঢাকায় ফেরেন বলে জানায় পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ইলমার সঙ্গে ইফতেখারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইফতেখার ও তাঁর মা–বাবা ইলমাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলেন। ইলমা পড়া বন্ধ করতে না চাওয়ায় ইফতেখার ও তাঁর মা–বাবা মিলে তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এক পর্যায়ে তাঁর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। বিয়ের তিন মাস পর ইফতেখার কানাডায় চলে যান। ১২ ডিসেম্বর তিনি ফিরে আসেন। গতকাল সাইফুল চৌধুরীর স্ত্রীর মুঠোফোনে কল করে ইফতেখার জানান, তাঁর মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আসতে বলেন তিনি।
সাইফুল চৌধুরী এজাহারে বলেছেন, তিন আসামি পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে ইলমাকে মারধর করে হত্যা করেছেন।