তাঁর কিছু নেই, তবু সবটুকু নিয়ে তিনি মানুষের পাশে
নিজের সর্বস্ব দিয়ে শতাধিক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাতারাতি সাভারে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তাঁকে নিয়েই প্রশংসার ফুলঝুরি। অনেকে তাঁকে বলছেন ‘সময়ের হিরো’।
তাঁর নাম মো. রতন শেখ (৪৫)। সবার কাছে তাঁর পরিচয় সুইপার রতন শেখ। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার কাটাখালি গ্রামের আলিমুদ্দিন শেখের ছেলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাত্র আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন সাভার পৌরসভার জামসিং জয়পাড়া আব্বাস ফরাজীর বাড়িতে।
তিন সন্তানের জনক রতন শেখের বড় ছেলে মো. মনির শেখ (১০) ধামরাইয়ের সুঙ্গুরচর এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মেয়ে সুলতানা (৭) জামসিংয়ের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আরেক মেয়ে নদীর বয়স তিন বছর। কখনো কাজ থাকে কখনো বা থাকে না। সবমিলিয়ে টেনেটুনে চলে রতনের সংসার।
নিজের সঞ্চয়ের সবটুকু নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাভারে নেটিজেনদের মধ্যে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেছেন রতন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীন শতাধিক মানুষের মধ্যে নিজেই তুলে দিয়েছেন পরিবার নিয়ে ১০ দিনের চলার মতো চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম ও হাত ধোয়ার সাবান।
খুব সাধারণ একজন পরিচ্ছন্নকর্মীর এই মানবিক বোধ নজর কেড়েছে সবার।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। পরে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ।
সেই মানুষদের অনেকেই পায়নি সরকারি সাহায্য। তাদের কষ্ট আর বেদনার বিষয়টি উপলব্ধি করে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন রতন শেখ।
গোপনে গত শনিবার বিকেল থেকেই সাধ্যমতো মানবিক সহায়তা নিয়ে শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি যান রতন শেখ।
তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর এই মানবিক প্রচেষ্টা আর গোপন থাকেনি। মুখে মুখে রটে যায় রতন শেখের এই মানবিক উদ্যোগের কথা।
সাভার ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি মো. শামীম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জীবন হাওলাদার বলেন, সত্যিই অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন সুইপার রতন শেখ। সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যারা মানুষের সঙ্গে তামাশা করেন। নিজেদের সামান্য অবদানকে অনেক বড় করে জাহির করতে প্রচারে ব্যস্ত হন, তাদের জন্য দৃষ্টান্ত রতন শেখ। রতন শেখ বাড়ি বাড়ি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন সেটা আমাদের নজরে আসে। এরপর আমরাই বিষয়টি তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট করি। তারপর থেকেই নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন রতন শেখ।
তবে এসব মন্তব্যের বিপরীতে রতন শেখের সাফ কথা, তিনি কোনো প্রশংসা কুড়াতে নয় কিংবা বাহবা পেতে নয়। কাজটি করেছেন নিজের দায়িত্ববোধ থেকে, বিবেকের তাড়নায়।
কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে লিখেছেন, সময়ের আসল হিরো রতন শেখ।
রতন শেখের স্বপ্ন তাঁর সন্তানরা যাতে মানুষের মতো মানুষ হয়।