তাদের মুখে আদালত অবমাননার কথা মানায় না : ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

‘বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত অবমাননা করেছেন’—আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যত অপকর্ম আছে, তারা করেছে। হাইকোর্টে তারা লাথি মেরেছে, লাঠি মিছিল করেছে। যারা আদালতে লাথি মারে, লাঠি মিছিল করে, তাদের মুখে আদালত অবমাননা করা হয়েছে— এ কথা মানায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার জানে, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই তাঁকে মুক্তি দিচ্ছে না।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের অবৈধ সাজা বাতিল ও স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে ’৯০-এর ডাকসু সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন ফখরুল।

এ সময় ফখরুল বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য আদালত অবমাননা করেছেন। কারণ, আদালত ৫ তারিখের মধ্যে দুটি রিপোর্ট চেয়েছিল। কোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে এই রিপোর্ট ডাক্তারদের স্বাক্ষরসহ হাজির করতে হবে। কিন্তু তাঁরা করেননি। তার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, খুব ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সরকার আদালত অবমাননা করেছে। বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর, তিনিও আদালত অবমাননা করেছেন।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘দেশে বিচার বিভাগের যে অবস্থা, সেখানে কে কতটা সাহস রাখবেন, তা আমি জানি না। সরকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যখন বলেন যে সব ঠিক আছে, তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ আছেন, তখন বিএসএমএমইউর উপাচার্য এবং ডাক্তারদের কয়টা মাথা আছে যে বলবেন, তিনি খারাপ আছেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গতকাল আমরা প্রধান বিচারপতির রায় দেখে বিস্মিত হয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেল সব সময় সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এমনভাবে চেষ্টা করেন যে সরকারের না হয়ে দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এত কিছুর পরও আমরা হতাশ হয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগ এ বিষয়টি লক্ষ করেনি। এ বিষয়ে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেয়নি।’

ফখরুল আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে সাজারত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। অথচ বিচারক গতকালের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছে। আমরা তো মনে করছি, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন, বিচারক তাঁর পক্ষে না থেকে যাঁরা আদালত অবমাননা করেছেন, তাঁদের পক্ষে ছিলেন। এ জন্যই আমরা এটাকে নজিরবিহীন মনে করছি। এটা দুর্ভাগ্য এ দেশের জাতির জন্য।’

খালেদা জিয়া প্রায় পঙ্গুত্বের আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘ডাক্তাররা রিপোর্টে দিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ, তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। এই সরকার চক্রান্ত করে সেই রিপোর্ট বাতিল করার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছে। আমরা তীব্র আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই। অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে যে স্বৈরশাসন চালানো হয়েছিল, দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করে, সেই স্বৈরশাসন ভেঙে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া। আজ তাঁকেই বন্দি করে রাখা হয়েছে। আজকের সরকার স্বৈরশাসক এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতায় আছে।’

জাতি আজ গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায় রয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য, আজকের জাতি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছে। তার মূল বিষয়বস্তু ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। আজকে সেই জাতি গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায়। এরশাদের বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যাঁরা রাস্তায় নেমে প্রাণ দিয়ে জাতির জন্য লড়াই করলেন, তাঁদের সঙ্গে সেদিন কিন্তু বেইমানি করা হয়েছে। আজকে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গেছেন। আজকেও তারা সেই স্বৈরাচার এরশাদের দলের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’

দেশে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিনহা সাহেব তাঁর বইয়ে বলে গিয়েছিলেন, ‘আমাদের যা কিছু অর্জন, তা দানবের মতো সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।’ আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র সব ধ্বংস।”

সভাপতির বক্তব্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আজ গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে গণতন্ত্রের মা, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার বাইরে থাকার কথা। কিন্তু আজ তিনিই কারাগারে বন্দি আছেন। আপসহীন নেত্রী বলেই আজ তাঁকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চাই।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।