তিন ছাত্রলীগ নেতার অক্সিজেন সেবা এখন সারা দেশে

Looks like you've blocked notifications!

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাশে গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেওয়া শুরু করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতা। সেবা দিতে গিয়ে করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু দমে যাননি। বরং অন্যদেরও সেই লড়াইয়ে সঙ্গী করার সাহস জুগিয়েছেন। ছাত্রলীগের সেই তিন নেতার মানবিক লড়াইয়ে এখন যুক্ত হয়েছেন প্রায় দেড়শ স্বেচ্ছাসেবক। আর এই কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

গত বছরের জুন মাসে শুরু হয় এই সেবার কার্যক্রম। যার নাম দেওয়া হয় ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সার্ভিস’। এর স্লোগান ‘একটি নতুন ভোরের প্রতিক্ষা’। ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রাজধানীতে শুরু হওয়া এই সেবা কার্যক্রম এখন ২৩০ দিন পার করছে। এ পর্যন্ত এখান থেকে সেবা পেয়েছেন তিন হাজার ৮০৪ জন।

জয় বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের উদ্যোক্তা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক উপসম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ।

সাদ বিন কাদের চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দেয়। অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। ঠিক সেই সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। নির্ধারিত মূল্য থেকে কয়েকগুণ বেশি দামেও পাওয়া যাচ্ছিল না অক্সিজেন সেবা। প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটত রোগী ও স্বজনদের। সেই মুমূর্ষ রোগীদের সেবা দিতে আমরা বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিতে শুরু করি। এটি নন-কোভিড রোগীদের জন্যও প্রযোজ্য।’

গত বছরেরর ২৫ জুন রাজধানীতে শুরু হয় এই সেবা। এরপর ২৫ ও ২৯ জুলাই আরো দুটি বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে কার্যক্রম শুরু করেন তিন তরুণ। এ ছাড়া ৬ আগস্ট শুরু হয় কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ কার্যক্রম। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট বিভাগে এই সেবা শুরু হয়।

গত বছরের ৩ আগস্ট ফেনী জেলার মাধ্যমে শুরু হয় জেলাভিত্তিক কার্যক্রম। ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় ও ২৬ নভেম্বর শুরু হয় বগুড়া জেলায় অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম। বর্তমানে কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ এবং খুলনায় কুরিয়ারের মাধ্যমে এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় দেড়শ স্বেচ্ছাসেবী এতে যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা ৮০টির মতো সিলিন্ডারের মাধ্যমে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গত সাড়ে সাত মাসে তাঁদের কাছ থেকে সেবা নিয়েছেন তিন হাজার ৮০৪ জন।

এই সেবা নিয়ে কাজ করা অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন সাদ বিন কাদের ও সবুর খান কলিন্স। তাঁরা জানান, গত বছরের অক্টোবরে তাঁরা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। একই সময় সাদ বিন কাদেরের পরিবারের সদস্যেরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। কিন্তু থেমে থাকেননি তাঁরা।

সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘শুরুর দিকে কোভিড-১৯ রোগীদের অক্সিজেন দিতে গেলে আশপাশের বাসা থেকে বাধা আসতো, যদিও বর্তমানে সেটি নেই। বর্তমানে অক্সিজেন সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে আরো বেশি লোককে আমরা সেবা দিতে পারতাম।’

এই সেবা পেতে হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। সেবা কার্যক্রমের প্রথম দিকে সেবা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিলিন্ডার ফেরত দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখন তা বাড়ানো হয়েছে। রোগীর যত দিন প্রয়োজন তত দিন তারা সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারবে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনার সময় দেশের মানুষকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। আমরা এই সেবার উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরীসহ অন্য যাঁরা আছেন, সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখি। তাঁদের প্রতি সবসময় আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’

সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তাদের এই সেবার জন্য আমরা গর্বিত। যে তিনজন এই উদ্যোগ নিয়েছে তাদের পাশে আমরা সবসময় আছি, থাকব।’

সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, “আমরা যখন বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ চালু করি তখন পুরো সংকটময় সময়টা মানুষের পাশে থাকার দৃপ্ত শপথ নিয়েই এই সেবা চালু করি। এই সেবায় মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছি। আসলে এত সুন্দরভাবে মানুষের সেবা করা সুযোগ সবসময় আসে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সংকট যত দিন তত দিন এই সেবা চালু থাকবে।”