তিস্তার পানি দেয় না, টিকা দিচ্ছে, এত দরদ : রিজভী

Looks like you've blocked notifications!

তিস্তার পানি না দিয়ে উপহার হিসেবে ভারত কেন বাংলাদেশকে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা দিচ্ছে—এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমাদের তো তিস্তার পানি দেয় না, ২০ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে, এতই তাদের দরদ উথলে পড়ল। এখানেই তো সন্দেহ রয়েছে। যারা আমাদের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় না, তারা করোনার টিকা দিবে আমাদের জন্য পরীক্ষা চালানোর জন্য? আমাদের তেলাপোকা বানানোর জন্য? আমাদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য?’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে গত ১৯ জানুয়ারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার  শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভারত থেকে যে টিকা এসেছে, তা বাংলাদেশের মানু‌ষের ওপর প‌রীক্ষা চালা‌নোর জন‌্য এসে‌ছে। ওরা (ভারত) দেখবে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে মানুষ বাঁচে, না মরে, না অসুস্থ হয়। তারপর ভিআইপিরা নেবে। তারপরে ভারত নেবে। ভারত বলছে, তারা মার্চে এটার ট্রায়াল করবে।’

রিজভী আরো বলেন, ‘কত বড় বিপজ্জনক ও সর্বনাশা খেলায় মেতেছে সরকার। বাংলাদেশের মানুষ অন্য দেশের গবেষণাগারের প্রাণী হিসেবে কাজ করবে? বাংলাদেশের মানুষ তেলাপোকায় পরিণত হয়েছে। গবেষণাগারে যেমন তেলাপোকাকে পরীক্ষা করা হয়, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের উপর টিকা দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে আমরা তেলাপোকায় পরিণত না হই। সরকার নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভুরা যা বলছে তাই করছে। কই আমাদের তিস্তার পানি তো দেয় না। ২০ লাখ ডোজ দিল, তাদের দরদ এত উথলে গেছে? তিস্তায় পানি দেয় না, ভালো বন্ধু হলে তো  দিতেন।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকার আরেকটি ভানুমতির খেল দেখাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে। ২০ লাখ লোককে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেবে। ভারত থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছে। ভারতের হাইকমিশন বলছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই ভারতের বড় বন্ধু, অন্য কেউ না। যারা একটি দেশের একটি রাজনৈতিক দলকে বন্ধু মনে করে, তাদের দেওয়া ভ্যাকসিন যদি দেশের জনগণ নেয়, তাহলে মানুষ বাঁচবে কি বাঁচবে না, সেই গ্যারান্টি নাই।’

রিজভী আরো বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে ভ্যাকসিন ভিআইপিদের আগে দেওয়া হবে না। আগে দেওয়া হবে সাধারণ জনগণকে। প্রশ্ন হলো, ভিআইপিদের আগে দেওয়া হবে না কেন? আগে ভিআইপিদের দিন, তারা সুস্থ থাকুক, তারপর দেশের জনগণকে দিন। কিন্তু এখানেই রহস্য, সরকার সাধারণ জনগণকে আগে ভ্যাকসিন দিয়ে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে চায়। কারণ, দেশের মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন নেবে, তাদের একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। সেই সম্মতিপত্রে নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানা থাকবে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয় বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে সরকার দেখ‌বে। এখানেই তো সন্দেহ ঢুকে গেল। এই যে সম্মতিপত্র, অঙ্গীকারনামা—এটা কেন? বিজ্ঞানের পরীক্ষায় যদি উত্তীর্ণ হয় যে এই টিকা সাধারণ মানুষকে দেওয়া যাবে, তাহলে অঙ্গীকারনামা কেন? এই যে অঙ্গীকারনামা, সম্মতিপত্র, এর থেকে প্রমাণিত হয়, ভারত থেকে যে টিকা আসছে তার মধ্যে সন্দেহ আছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ আগে টিকা নেবেন না। আগে দেওয়া হবে গরিব, সাধারণ জনগণকে।’

রিজভী আরো বলেন, ‘আমাদের মাথা ব্যথা, সর্দি, জ্বর হলে প্যারাসিটামল কিনি। কারণ জানি এই ওষুধটা খেলে আমাদের মাথা ব্যথা সারবে। তখন তো অঙ্গীকারনামা দেওয়া লাগে না, মুচলেকা দেওয়া লাগে না। করোনার টিকা নিতে এখন অঙ্গীকারনামা দিতে হবে কেন? এর কারণ হলো, ভারত থেকে যে টিকা আসছে, তা বাংলাদেশের মানুষের ওপর গবেষণা চালানোর জন্য।’

বিএনপির এই নেতা ব‌লেন, ‘সুস্থ নির্বাচনকে একেবারে পরপারে পাঠিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আর এ কারণে যাদের আজ জনপ্রতিনিধি হওয়ার কথা, তারা জনপ্রতিনিধি নয়। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, যারা জনগণের শত্রু, তারাই প্রতিনিধিত্ব করছে। কেউ চেয়ারম্যান হচ্ছে, কেউ এমপি হচ্ছে, কেউ টাকা পাচার করছে, কেউ বা ক‌্যাসিনো বাণিজ্য করছে। এসব আমার কথা নয়, সংবাদমাধ্যমের কথা।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ সরকার দিনের ভোট রাতে করেছে। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু যারা (নিজ দল বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) জনগণকে ভালোবাসে, তারা এখনো জনগণের পাশে আছে। তারা ক্ষমতায় থাকুক আর না থাকুক, জনগণের দুঃখ-কষ্টে সবসময় পাশে আছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী প্রমুখ।