দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ : ৩ পুলিশ সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব

Looks like you've blocked notifications!

দিনাজপুরে মুক্তিপণের দাবিতে মা ও ছেলেকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত তিন পুলিশ সদস্যের ছয়টি সিমে বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ও তাদের ব্যাংক হিসাব নাম্বারে কী ধরনের লেনদেন হয়েছে তদন্তকারী সংস্থা থেকে তা তলব করা হয়েছে।

দিনাজপুর ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ নিশ্চিত করেছেন।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রংপুর সিআইডি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সারোয়ার কবীর সোহাগ, উপসহকারী পরিদর্শক মো. হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসানুল হক ফারুকের ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল ফোনের সিম কার্ডে বিগত সময়ে কী ধরনের বিকাশে লেনদেন হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য জানতে গ্রামীণফোন ও রবির কর্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের লেনদেনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।’

ডিবির পরিদর্শক বলেন, ‘অভিযুক্ত এই তিন সিআইডি পুলিশ সদস্য তাদের গ্রামীণফোন এবং রবি নম্বরে ঘটনার আগে তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কী ধরনের তথ্য বিনিময় করেছেন ও কারা তাদের সঙ্গে এই অপকর্ম এবং ঘটনায় জড়িত সে বিষয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত দুজন এবং পালিয়ে থাকা পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে ডিবি পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পালিয়ে থাকা আসামি আরেফিন শাহ, সোহেল হোসেন, সুমন মিয়া, জাহিদ হোসেন ও রিয়াদ হোসেন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। তারা সম্ভবত অন্য নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালাচ্ছেন।

পরিদর্শক জানান, আসামিরা একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তদন্তে তাদের একাধিক অপরাধ জড়িত ঘটনার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলমান রাখা হয়েছে। তারা চাঞ্চল্যকর কয়েন ও জাল টাকা বিনিময় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে একাধিক ঘটনা সংগঠিত করেছে। তাদের মোবাইল ফোনগুলোকে বিকাশে লেনদেন হতো সে বিষয়ে সার্বিক তথ্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তলব করা হয়েছে।

এদিকে, সিআইডি সদর দপ্তরের নির্দেশে দিনাজপুর সিআইডি জোনের বিশেষ পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তারকৃত তিন সিআইডি পুলিশ সদস্যের বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে সিআইডির ওই কর্মকর্তা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।

পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। ওই তিন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারে ব্যাংক একাউন্টে কী ধরনের লেনদেন হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে হিসাব তলব করেছেন। তিনি তাদের বিকাশ নম্বরে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন এবং মোবাইল ফোনে যাদের সঙ্গে বেশি কথাবার্তা হয়েছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন।

সব মিলিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে অপরাধী পুলিশ সদস্যদের দায় পুলিশ বিভাগ গ্রহণ না করে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডি সদর দপ্তরে পাঠানো হবে বলে সিআইডির অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেড়াই গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকে নিজ বাসায় মারপিট করার পর মাইক্রোবাসে অপহরণ করা হয়। জহুরা বেগমের বাড়ির লোকজন র‌্যার, পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেয়। কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। অপহরণকারীরা মোবাইলে জহুরা বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজানের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

২৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিপণের টাকা দিতে যায় লুৎফর রহমান ও রমজান আলী। অপহরণকারীরা বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে সিভিল ড্রেসে পুলিশ রয়েছে। টের পেয়ে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দিনাজপুরের ১০ মাইল এলাকা থেকে পুলিশ তাদের আটক করে।