দিনাজপুরে সমতলে চা চাষে সফল মমিনুর
উত্তর জনপদের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর পর এবার দিনাজপুরের খানসামায় শুরু হয়েছে চা আবাদ। এমনকি এরই মধ্যে এ উদ্যোগে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার মমিনুর ইসলাম।
পাহাড়ি ঢালু বা উঁচু ভূমি চা চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু দিনাজপুরের খানসামায় চা চাষ হচ্ছে সমতলে। অসম্ভব এই কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন চা বাগানটির মালিক মমিনুর ইসলাম। তিনি পঞ্চগড়ে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। দেশের অন্যান্য জেলায় চা চাষ করা গেলে নিজ উপজেলায় কেন নয়? দুই বন্ধুর এমন কথা বেশ মনে ধরে মমিনুরের। সিদ্ধান্ত নেন নিজ উপজেলায় চা চাষ করবেন তিনি। শুরুটা তখন থেকেই।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, খানসামা উপজেলার অবস্থান হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এ এলাকায় চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলায় চা চাষ করে যে উৎপাদন হচ্ছে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদানও রাখছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের পর সমতলে চা চাষের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
উপজেলার প্রথম চা বাগান সহজপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চা বাগান মালিক মমিনুর ইসলাম, তাঁর বাবা নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক চায়ের পাতা সংগ্রহ করছেন।
এই চা বাগান নিয়ে মমিনুর ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড়ে চাকরি করতে গিয়ে চা চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। দুই বন্ধুর পরামর্শে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলায় প্রথম এক একর জমিতে চা চাষ শুরু করি। এতে জমি প্রস্তুত, বীজ, শ্রমিক মিলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর প্রথম ছয় মাসের প্রতি মাসে স্প্রে, নিড়ানি ও সার দিতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এরপর গাছ বড় হওয়ায় এখন প্রতি মাসে নয় থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। চা বাগান করার ছয় মাস পর প্রথম এক কেজি চা পাতা সংগ্রহ হয়েছিল। তবে এ বছর প্রথমে ৩০০ কেজি, দ্বিতীয় বারে ৯৩০ কেজি এবং তৃতীয় বারে দুই হাজার কেজি চা পাতা পাই। এগুলো ১৪ টাকা কেজি দরে দেবীগঞ্জ পপুলার চা কারখানায় বিক্রি করি। বাগান থেকে ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর পর চা পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পাতা সংগ্রহের পরিমাণও বাড়বে। প্রতি মাসেই চা পাতা বিক্রি করা যাবে।’
মমিনুর ইসলাম আরো বলেন, ‘চা চাষের উপযোগী এ মাটিতে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে এজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খরার সময় পাইপের সাহায্যে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। চা গাছে নিবিড় পরিচর্যা, পরিমিত পানি সেচ, জৈব সার ব্যবহার করেন তিনি। একবার চা বাগান করলে সেখান থেকে ৮০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করা যায়। যা নিঃসন্দেহে লাভজনক।’
মনিনুর ইসলাম এই উপজেলার চাষিদের চা চাষে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে মমিনুরের ধান চাষের জমিতে চা বাগান দেখে এলাকার মানুষ উৎসাহী হয়ে অনেকে চা আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের রাজিব ইসলাম আত্রাই নদীর কোল ঘেঁষে চার মাস আগে তিন একর জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন। এ ছাড়া নেউলায় দুটি পরিবার ও পাকেরহাটের বাসিন্দা রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা ঐশী চৌধুরীসহ অনেকে চা বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘হিমালয়ের নিকটবর্তী খানসামা উপজেলার অবস্থান। এ কারণে এখানে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযুক্ত। চা গাছ নিবিড় পরিচর্যা, পরিমিত পানি সেচ দিতে এবং যত্ন নিতে হবে। এ অঞ্চলে কয়েকজন চা চাষে এগিয়ে এসেছে। এটা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন চা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।’