দিয়াবাড়ীতে কোয়ারেন্টিন সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ
করোনাভাইরাস আতঙ্ক পুরো বিশ্বজুড়ে। সেই আতঙ্কে আতঙ্কিত রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের (আবাসিক) এলাকা। ১৮ নম্বর সেক্টরের কুঞ্জলতা-১৬ ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার করছে সরকার। আর এই খবরেই ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সেই আতঙ্কে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কোয়ারেন্টিন সরানোর দাবিতে তারা বসে গেছেন ওই ভবনের সামনেই। কোয়ারেন্টিন সরাতে দিয়েছেন চিঠিও।
আজ শুক্রবার বিকেলে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের (আবাসিক) এলাকা গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়দের দাবি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে
সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিতান্তই ভুল সিদ্ধান্ত। এখানে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এমন ঘনবসতিযুক্ত স্থানে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে তারা ঘরে ফিরবেন না।
বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়দের বিক্ষোভের ভেতর পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের উপস্থিতি দেখে স্থানীয়রা রাজউকের কর্মকর্তাদের ভৎসনা করা শুরু করেন। সেসময় মাইকে কথা বলেন শফিকুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘রাজউক তুমি কোথায়? আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে পুলিশ পর্যন্ত নিয়ে এসেছো? আপনারা কী সরকারকে বিপদে ফেলতে চান? নাকি এখানে ফেলে আমাদেরকে মারতে চান? এখানে পুলিশ কেন? আপনারা (পুলিশ) এখুনি এখান থেকে সরে যাবেন। আমরা টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছি নিরাপত্তাহীনতায় থাকার জন্য নয়।’
১৮ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. বিধান চন্দ্র দাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখানে অন্তত সাড়ে ৫০০ পরিবার বসবাস করেন। এখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা থাকে আর সেখানেই ভয়ংকর রোগীদের আনা হবে! আমি বা আমার সন্তান আক্রান্ত হলে এই দায় কে নেবে? অথচ, যেখানে সরকার আমাদের সেইভ করার কথা।’
বিধান চন্দ্র দাস বলেন, ‘ধরেন, এখানে সাসপেকটেট রোগীদের আনা হবে। তাদের ভেতরে দু-একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না, এমন তো নয়। ওই রোগীদের নিশ্চয় আমাদের চলার পথ দিয়ে আনা হবে বা নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। কেন আমি সেটা চাইব? সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আমরা এখান থেকে যাব না। সরকার ফাঁকা কোনো স্থানে এই কাজ করুক। তাতে তো আমাদের কোনো সমস্যা নেই্।’
এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান সাইদ নূর আলম, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আহসান কবীর, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৮ নম্বর সেক্টরের অনেকেই রাজউক চেয়ারম্যান, ডিসি ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বসে স্থানীয়রা এখানে নির্ধারণ করা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সরিয়ে নেওয়ার জন্য রাজউকের চেয়ারম্যানের বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন। আবেদনপত্র গ্রহণ করার সময় রাজউক চেয়ারম্যান স্থানীয়দের বলেছেন, সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবুও আমি এই আবেদনপত্র ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারপর সরকার যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তাহলে তো হলোই। যাই হোক, দ্রুতই একটি সিদ্ধান্ত পাবেন আপনারা।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জাহিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। স্থানীয়রা ভুল বুঝেছেন। এটা কিন্তু কোনো আইসোলেশন সেন্টার নয়। এখানে রোগীদের রাখা হবে না। স্রেফ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এখানে নির্দ্দিষ্ট কিছু মানুষের যাতায়াত থাকবে। সুতরাং কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।’