দুই মেয়ের সঙ্গে জাপানি মা থাকবেন সকালে, বাবা থাকবেন বিকেলে

Looks like you've blocked notifications!

জাপানি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।

৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্টে হাজির করতে হবে। ওইদিন আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন। তবে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ৩১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে বলেছেন।

আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম।

এর আগে আজ সকালে আদালতের আদেশে হাজির করার নির্ধারিত দিনের আগেই দুই জাপানি শিশুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে এনেছেন শিশুদের বাবার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম।

দুই জাপানি শিশুকে উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ফাওজিয়া করিম আদালতে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় শিশুদের বাসা থেকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৩টার পর তাদের তেজগাঁওয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইনজীবী আরও বলেন, আমরা শুনেছি ওই দুই শিশুকে আজ নিম্ন আদালতে হাজির করা হবে। এদিকে আপনাদের আদেশ আছে হাইকোর্টে হাজির করার। তাহলে নিম্ন আদালতে কেনো নেওয়া হবে? আমরা তো আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করিনি। এ বিষয়ে আমরা একটি আবেদন করতে চাই। অনুমতি দিলে দুপুর ২টায় উপস্থাপন করব।

তখন শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, বাচ্চাদের এভাবে নিয়ে গেল এটা কোনো সমাধান হলো না।

শিশির মনির আদালতকে বলেন, গতকাল রাতে সিআইডি থেকে আমাকে ফোন করে শিশুদের মাকে নিয়ে যেতে বলে। আমি সেখানে যাই। যাওয়ার পর শিশুদের সঙ্গে ৪০ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান মা। ওই সময় আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলি হাইকোর্টের আদেশ আছে। আপনারা যা ইচ্ছে তা করতে পারেন না।

তখন ফাওজিয়া করিম বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে বাচ্চাদের সঙ্গে অবস্থান করছেন তাদের বাবা। তাদের মা ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করে চলে যান।

এ সময় শিশুদের মায়ের আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, এটি স্পর্শকাতর বিষয়। বাচ্চাদের যেন সবার সামনে উপস্থিত না করা হয়।

জবাবে ফাওজিয়া করিম আদালতকে বলেন, আপনারা বাচ্চাদের কথা শোনেন। আপনারা যে আদেশ দেবেন তা আমরা মেনে নেব। তবে সাপোর্ট সেন্টারে শিশুদের নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আবারও বলেন, নিম্ন আদালতের পরিবর্তে শিশুদের হাইকোর্টে নিয়ে আসুক।

পরে আদালত সম্পূরক আবেদনের সুযোগ দিয়ে শুনানির জন্য দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করেন।

গতকাল ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দুটিকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ১৯ আগস্ট দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন ওই নারী।