দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে কুমিল্লার ‘বাঁশের বাঁশি’

Looks like you've blocked notifications!
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাঁশি তৈরিতে ব্যস্ত কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দির কারিগররা। ছবি : এনটিভি

একদিন পরই বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বাঙালির আয়োজনের শেষ নেই। বৈশাখকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসেছে এবং বসতে চলেছে বৈশাখী মেলা। মাটির তৈরি হাড়িপাতিল, কলস, পুতুলসহ মেলায় স্থান পাবে নানা সামগ্রী। এ মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ‘বাঁশের বাঁশি’। ছোট-বড় সকলের কাছেই প্রিয় এ ‘বাঁশের বাঁশি’ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে বিদেশেও। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পরিসর ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে বলে মনে করছেন বাঁশি তৈরির কারিগররা।

পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখেই কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি ও সদর উপজেলার মানুষ এখন ব্যাস্ত সময় পার করছেন। যদিও সারা বছর ধরেই বাঁশি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন এই এলাকার হাজারো মানুষ। চৈত্র মাস এলেই যেন নিজেদের মধ্যে চলে বাঁশি তৈরির প্রতিযোগিতা। গ্রামের ১৩০টি পরিবার রাতদিন তৈরি করছেন বাঁশি।

জানা গেছে, প্রতিটি পরিবারই এ বছর মেলায় গড়ে  যোগান দেবে এক লাখ বাঁশি। এসব বাঁশির রয়েছে বাহারি নামও। আঁড়, মুরালি, খিলা, নাগিন আর বেলুনসহ নানা বাহারি নামের বাঁশি পাওয়া যায় বৈশাখী মেলায়। এ ছাড়া উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত মূল্যবান বাঁশিও তৈরি হয় এখানে। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা বাঁশি সংগ্রহ করে এখান থেকে।

এ এলাকার বাঁশি তৈরির কারিগররা জানান, যে বাঁশি আমরা অনেক সহজে আমরা হাতে পাই, তা তৈরিতে কারিগরদেরকে পেরুতে হয় বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রথমে মুলি কেটে রোদে শুকাতে হয়। পরে ছাঁচ (চামড়া) ছিলে ফেলা হয়। তবে আড় বাঁশি তৈরিতে কোনো ছাঁচে ফেলা হয় না। প্রতিটি বাঁশি ছিদ্র করার জন্য স্কেলের মাধ্যমে পেনসিল দিয়ে দাগ কাটা হয়। আড় বাঁশির ক্ষেত্রে কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করে আগুনের সেঁক দেওয়া হয়। পরে বাঁশির গা থেকে মাটি শুকিয়ে পড়ে যায় এবং নকশা ফুটে ওঠে।

চোখা শিক দিয়ে ছিদ্র করা হয়। সে কাজে ব্যবহার করা হয় কয়লা। মুখ ও তোতা কাটার পরে মান্দাল কাঠ দিয়ে 'কটি' দেওয়া হয়। মৃসণ করতে শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষা হয়। এরপর ধোঁয়ার কাজ শেষ করে বিভিন্ন রং দিয়ে নকশা করা হয়। পরে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়।

বাঁশির কারিগররা আরও জানান, শ্রীমদ্দিতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের এসব বাঁশি পয়লা বৈশাখের পাশাপাশি সারা বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন মেলায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি রপ্তানিতে সহায়তা করে। শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে।

কারিগরদের অভিযোগ, আজকাল মেলা প্লাস্টিকের সামগ্রীর প্রভাবে বাঁশির চাহিদাও কমে আসছে। এ ছাড়া কারিগর সংকট এবং কয়লার দাম বেশি থাকায় আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না তাঁরা।  এদিকে বিদেশে চাহিদা থাকলেও কুমিল্লার বাঁশিশিল্প উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তেমন নেই।

এ এলাকার বাঁশির কারিগররা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।