দেশে ফ্যাসিবাদ ও একনায়কতন্ত্র চলছে : ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে ফ্যাসিবাদ ও একনায়কতন্ত্র চলছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে।’
আজ শুক্রবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এখন সংবাদমাধ্যমও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এই দেশ। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটা যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বিবার্ষিক সম্মেলন যখন হচ্ছে, তখন সাংবাদিকতায় সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্রের কাঠামো এবং সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ ছাড়া প্রযুক্তির কারণেও চ্যালেঞ্জ পেতে হচ্ছে। নিউজপেপারে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। কারণ, পরের দিন সকালে যখন তাঁদের নিউজটি ছাপা হয়, তার আগেই মোবাইল বা অনলাইনে সে খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে মুক্তচিন্তার যে বাতাস বইছিল, তা সরিয়ে দিয়ে একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ বেশ জানান দিয়ে সারা পৃথিবীতে এসেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যুগে যুগে যারা মুক্তি, স্বাধীনতার লড়াই, সংগ্রামের কথা বলে, তাদের নিয়মিত নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আবার এরপর কিছুদিন সুবাতাস বইলেও আবার সে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে অনেক বরেণ্য সাংবাদিকের লেখা আমরা দেখেছি। তাঁরা অনেক সত্য কথা লিখেছেন, বলেছেন মানুষের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পর যখন গণহারে দালাল বানানো হচ্ছিল, তখন সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান লিখেছিলেন, ‘ফোর অ্যান্ড হাফ ক্রোর কোলাবরেটর?’ এর অন্তর্নিহিত ছিল যাঁরা যুদ্ধের সময় ভারতে যাননি, তাঁদের ‘কোলাবোরেটর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সে সময় বিশেষ ক্ষমতা আইনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল না। সেদিনও যাঁরা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন তাঁদের নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন সে অবস্থা ফিরে এসেছে, কিন্তু একটু ভিন্ন চেহারায়। এখন তারা আইন তৈরি করে যাতে আপনারা আইনের বাইরে না যান এবং তারা যাতে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সংবাদপত্র এখন সাংবাদিকদের হাতে নেই। চলে গেছে করপোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে। তারা তাদের জন্য কাজ করছে, ফলে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করা হচ্ছে এটা দেখা যাচ্ছে। এর উল্টো চিত্র আছে। আপনাদের মাধ্যমেই আমরা জেনেছি কীভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। আপনাদের জন্য জানতে পারি কীভাবে ব্যাংক লুট হয়েছে, কীভাবে সম্পদ লুট করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে সরকারি সম্পদ ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। একনায়কতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ দেশকে দখল করে আছে। আমরা যদি ভারতবর্ষের দিকে তাকাই। যেখানে বলা হতো গণতান্ত্রিক চর্চা আছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। চ্যানেল বন্ধ করা হচ্ছে, কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি, তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবার, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার, এটিই আমাদের উপযুক্ত সময়। জনগণের লড়াই-সংগ্রামে সাংবাদিকরা সব সময় সামনের কাতারে ছিলেন। আমরা তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হই। এখানে বলা হয়েছে, ৩৮ জন সাংবাদিক গুম হয়েছেন। চাকরির নিশ্চয়তা নেই। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার বছরের পর বছর ঝুলে আছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ছাঁটাই হচ্ছে। সাংবাদিকরা কাজ করতে পারছেন না। অথচ দেখছি দু-একজন সাংবাদিক নেতা বহু উপরে উঠে গেছেন। এটাই বাস্তবতা। সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।’