দেড় বছর পর স্কুলে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছবিটি রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তোলা। ছবি : এনটিভি

করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও মুখরিত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিনে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে আবেগাপ্লুত ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পড়াশোনার পাশাপাশি আজকের দিনটি ছিল ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য মিলনমেলা। পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ার অনূভুতির বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। 

রাজধানীর কয়েকটি স্কুল ও কলেজে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ভোরবেলা থেকেই সাজ সাজ রব বিরাজ করছিল। বেলুন দিয়ে গেট সাজিয়ে ফুল হাতে নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে নিতে উৎসাহ-উদ্দীপনায় অপেক্ষায় ছিলেন শিক্ষকরা। তেমনি ছাত্রছাত্রীরাও প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য উদগ্রীব ছিল। অনেকে আগের রাত থেকে ঘুমাতে পারেনি। দীর্ঘ দেড় বছর পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেক কিশোর-কিশোরী আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। আবার প্রিয় শিক্ষকদের দেখা পেয়ে সবাই ছিল উচ্ছ্বসিত। এসবের পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ ছিল।

এ বিষয়ে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. লুৎফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কোনো নোটিশ ছাড়াই আজকে ৯৫ ভাগ ছাত্রছাত্রী কলেজে উপস্থিত হয়েছে। সকালে কলেজে সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করার পর ছাত্রছাত্রীরা একে অপরকে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলে। তাদের মধ্যে ভয়ভীতির লেশমাত্র ছিল না।’

এ শিক্ষক  আরও বলেন, ‘করোনায় আমাদের শিক্ষকদেরও স্টাডি স্থবির হয়ে পড়েছিল। প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় শিক্ষকদের মাঝেও প্রাণসঞ্চার হয়েছে। আমরা আশা করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ হবে না।’

প্রতিষ্ঠানটির বাংলা শাখার শিক্ষক পারভীন আলম মল্লিকা বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম আরম্ভ হয়। আমরা শিক্ষকরাও খুব আনন্দিত। অনেক ছাত্রছাত্রী আমাদের বলেছে, তারা এতটাই উদ্বেলিত ছিল যে, স্কুলে আসবে এ কারণে রাতে ঘুমাতে পারেনি।’

প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক পাপিয়া নাসরিন মুক্তি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষা চলায় ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রয়েছে।  তবে স্কুলে আসার পথে যা দেখলাম তাতে বিস্মিত,  কারণ দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে আবেগ আপ্লুত হয়ে গেছে।  

প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার মানবিক বিভাগের ছাত্রী মিথিলা আফরোজ প্রেরণা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কলেজ বন্ধ হওয়ার পর প্রথম তিন মাস ছাত্রছাত্রীরা জুমে ক্লাস করলেও পরবর্তী সময়ে সবার মধ্যে উদাসীনতা নেমে আসে। আজকে কলেজ খুলে দেওয়ায় সবাই অনেক খুশি।’

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান পূর্বাশা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছরের শিক্ষাজীবনে এত লম্বা ছুটি আর কখনো পাইনি। তবে এ ছুটি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য সুখকর ছিল না। এত দিন পর কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সবাই খুবই আবেগাপ্লুত ছিল। শিক্ষকদের সঙ্গে যখন দেখা হলো, সবার চোখে পানি এসে গেছে। কিছু ক্ষতি হলেও পরীক্ষার আগে আমরা চেষ্টা করব সময়টুকু কাজে লাগিয়ে ভালো ফলাফল করার।’

একই অনুভূতি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা রায় তমা। সে বলে, ‘আমি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রথমবর্ষে উঠার পর আজকেই আমাদের সরাসরি ক্লাস হলো। এমনকি কলেজের নতুন ভবনে আমাদের ফুল দিয়ে শিক্ষকরা বরণ করে নেন। সব মিলিয়ে দারুণ অনূভূতি।’

রাজধানীর পিলখানায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ ইফতেখার নাফিজ এনটিভি অনলাইনকে বলে, ‘গতকাল থেকেই মনের মধ্যে অনূভূতি তৈরি হয়; ক্লাসে যাব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয় হবে। আজকে কলেজে গিয়ে অনেক ভালো লেগেছে। সশরীরে ক্লাস করতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। এক কথায় অসাধারণ অনূভতি ছিল।’

করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। আর, মেডিকেল কলেজগুলো আগামীকাল সোমবার খুলবে। আজ দিনের শুরুতে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অনেক এলাকাতে দেখা গেছে পথে পথে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ অভিভাবকের সঙ্গে, কেউ দল বেঁধে সহপাঠীদের সঙ্গে; কেউবা একা। তাদের পরনে স্কুল-কলেজের পোশাক, পিঠে ছিল বইয়ের ব্যাগ।

করোনা এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে আজ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান শুরু হয়েছে।

অভিভাবকদের জন্য আট নির্দেশনা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্পন্ন কার্যপ্রণালিবিধি (এসওপি) ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এগুলো হলো সন্তানকে মাস্ক পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) সচেতন করা, প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পাঠানো ও বাসায় আসা নিশ্চিত করা, সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো, প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং স্কুলে যাওয়ার সময় পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার সন্তানের কাছে না দেওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা।

প্রাথমিকে দিনে তিনটি ক্লাস

মাধ্যমিক পর্যায়ে দিনে কয়টি ক্লাস হবে, তা মাউশি আগেই জানিয়েছে। এবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দিনে তিনটি করে ক্লাস হবে। এই সময়সূচি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।

সময়সূচি অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রতিদিন তিনটি করে ছয় দিন ক্লাস হবে। শনিবার চতুর্থ শ্রেণি, রোববার তৃতীয় শ্রেণি, সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণি ও মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণির ক্লাস হবে। সময়সূচিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই সূচি আপাতত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।