দ্রুত এগিয়ে চলছে পটুয়াখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ

Looks like you've blocked notifications!
পটুয়াখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ছবি : সংগৃহীত

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কয়লাভিত্তিক পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ব্যয় ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লি. (আরপিসিএল)’ চিনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।

সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (আরপিসিএল) ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জ্বালানিসহ মোট ২৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাধীন ধানখালী ইউনিয়নের ধানখালী, নিশানবাড়িয়া ও লোন্দা মৌজায় ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ সুবিধা রেখে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৯১৫ দশশিক ৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চীন ও বাংলাদেশের নির্মাণ শ্রমিক, কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা কাজ করে চলেছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি আবাসিক এলাকার নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। নগরের সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আবাসন। এতে ২৮১টি বাড়ি, মসজিদ, স্কুল, ক্লিনিক, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন সেন্টার, খেলার মাঠ, কররস্থান, পুকুর ইত্যাদি নির্মাণকাজ শেষ করে সম্পূর্ণতা দেওয়ার কাজ চলছে।

প্রকল্পের পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ভূমি অধিগ্রহণের পর ভূমি সুরক্ষাসহ ভূমি উন্নয়নকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফলে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ৩০ একর জমিতে দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বাড়িগুলোর চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।  

সরকারি মালিকানাধীন রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৯ মে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং চীন যৌথভাবে বিনিয়োগ করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে এক দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হবে প্রায় আট সেন্ট বা সাড়ে ছয় টাকা।

প্রকল্প পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম আরো বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি টারবাইনের নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২৭ ভাগ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বয়লার, স্টিম টারবাইন ও জেনারেটর আগামী আগস্টে চলে আসবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক চায়না নরিনকো কোম্পানির কর্মকর্তা চি ইউয়ে বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বড় কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। এখানে বিশ্বমানের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ ২৫ বছর ধরা হয়েছে। তবে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণ করা হলে এখান থেকে ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

বাস্তুচ্যুতদের আবাসনের জন্য নির্মিত বাড়ীগুলোর আরপিসিএল এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম ভুইয়া সাংবাদিকদের জানান, জমি অধিগ্রহণ করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী তিনগুণ দাম দেওয়া হয়েছে। আর এই বাড়ি আরপিসিএল দায়বদ্ধতা থেকে তৈরি করে দিয়েছে। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাদের এই বাড়ি দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে  প্রতিদিন ১২ হাজার মেট্রিকটন কয়লা লাগবে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রোলিয়া থেকে এই কয়লা আমদানি করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেশিনের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ব্লেডিং করে কয়লা ব্যবহার করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।  

বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর পর পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক দিক তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, নির্মানাধীন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতির বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২২০ মিটার উঁচু চিমনি থাকবে।  তিনি বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯৯ ভাগ ফ্লাইঅ্যাশ বয়লার টিউবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ফ্লাইঅ্যাশের চাহিদা থাকায় বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকবে।