ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরও খুলনায় চলছে না ট্রাক-কাভার্ডভ্যান

Looks like you've blocked notifications!
আজ বৃহস্পতিবার খুলনার মানিকতলা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে পরিবহন শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

গতকাল বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা হলেও খুলনা অঞ্চলে সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে ঢাকাসহ স্থানীয় ১৮টি রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বেবীসহ শ্রমিক নেতারা ফেডারেশনের সভায় অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জানান, এবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো ধর্মঘট করা হয়নি। আজ সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা নিজেরা কর্মবিরতি করছেন। তারা কাজ শুরু না করলে কোনো করণীয় নেই। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের বৈঠক শেষে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান।

খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গাফফার বিশ্বাস জানান, শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেছিল। তা আজও অব্যাহত রয়েছে। খুলনা অঞ্চলে কোথাও বাস, ট্রাক, কার্ভাডভ্যান, মাহেন্দ্র ও সিএনজি চলাচল করছে না।

সোনাডাঙ্গা থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিক জানান, আজ সকালে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস-ট্রাক ছেড়ে যায়নি।

এদিকে কর্মবিরতির পক্ষে মানিকতলা এলাকার খুলনা-যশোর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করছে শ্রমিকরা। সেখানে দেখা যায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে বিভিন্নভাবে ঘৃণা প্রকাশ করছে তারা।

এদিকে সড়কে ইজিবাইক চলাচল করতে চাইলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

গত বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়। রোববার ওবায়দুল কাদের জানান, ওইদিন থেকেই আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই ঘোষিত-অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ডাকতে শুরু করে পরিবহন সংগঠনগুলো। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

মঙ্গলবার বিকেলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিআরটিএ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকেও নতুন আইন কার্যকর না করার দাবি জানান পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে অচল হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়ে লোকজন।

বুধবার আইনটি স্থগিত চেয়ে নয় দফা দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পেশ করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরপর রাত ৯টার দিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে থাকা বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে জানানো হয়, যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে এমন আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের নয় দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং এজন্য আজকে আমাদের কর্মসূচি ছিল, কর্মবিরতি ছিল শ্রমিকদের-মালিকদের, এই কর্মবিরতি আমরা মন্ত্রীর কথায় প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি।’

বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতা তালুকদার মো. মনির বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না। আমাদের শ্রমিকরা আমাদের অনুমতি ছাড়াই গাড়ি বন্ধ কইরা দিছে বিধায় আমরা কর্মসূচি দিয়ে শ্রমিকদের ঠেকাইয়া রাখছি।’