ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইনের বাস্তবায়ন চেয়ে নোটিশ
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধন এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, মাদকবিরোধী সংগঠন ‘প্রত্যাশা’ এবং পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (পিডিও)-এর পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জমান লিংকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার-সংক্রান্ত আইন থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অকার্যকর। ফলে দেশে এ জাতীয় দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও আইন লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। এ জন্য প্রতিকার চেয়ে নোটিশ প্রেরণ করেছি।’
আইনজীবী মনিরুজ্জমান আরো বলেন, “আইনের ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতিরেকে কোন আদালত এ আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিবে না।’ যা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্তরাও যেন মামলা করতে পারেন, এ জন্য আইনের ১৪(২) ধারা সংশোধন চেয়েছি।”
নোটিশের বিবাদীরা যথাসময়ে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও জানান তিনি।
নোটিশে বলা হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জাতীয় পণ্যের প্যাকেটের গায়েই ক্ষতির বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। যদিও ধূমপায়ীরা এসব ক্ষতি সম্পর্কিত বার্তা আমলে নেয় না। এ জন্য ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্যের উৎপাদন উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব পণ্যের প্রচার-প্রচারণাও। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রায় প্রতিবছর বাজেটে সরকার কর বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত করারোপ ও ক্রমেই দাম বৃদ্ধি পেলেও ব্যবহার সে অর্থে কমানো যায়নি। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে করা আইনও অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর বলা চলে।
২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’ নামে কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই কনভেশনের বিধানাবলি বাংলাদেশে কার্যকর করার লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার।
আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনে পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান করলে তিনশ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার কিংবা বারবার করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আইনের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়।
আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ধারা ৫(১)(ক)-তে বলা হয়েছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোন ভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না।’ একই আইনের ধারা ৫(১)(ঙ)-তে বলা আছে, ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রামাণ্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না।’
অর্থাৎ আইনে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার ক্ষেত্রেও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ধূমপান কিংবা তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিতান্তই করতে হলে সতর্কবার্তাসমূহ ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ দেশের সিনেমা-নাটকে তামাকজাত দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার সতর্কবাণীও ব্যবহার করা হচ্ছে না।