নওগাঁয় কৃষকের ধান ঘরে তুলে দিচ্ছেন যুবলীগকর্মীরা

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁয় যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়া কৃষকদের ক্ষেতের ধান কাটা, বাড়ি নেওয়াসহ মাড়াই করে দিচ্ছেন। ছবি : এনটিভি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে শ্রমিক সংকটে পাকা ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। নওগাঁয় দিশেহারা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। করোনা পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়া কৃষকদের ক্ষেতের ধান কাটা, বাড়ি নেওয়াসহ মাড়াই করে দিচ্ছেন।

সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক না পাওয়া অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিতে নওগাঁয় ১০০টি কমিটি গঠন করে দিয়েছে জেলা যুবলীগ। কমিটির সদস্যরা প্রতিদিনই বিপাকে পড়া চাষিদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছেন। এই কার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন সে কারণে খুশি এলাকাবাসী ও কৃষকরা।

এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা আজ বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়া মাঠে দরিদ্র চাষি হারুনুর রশীদের দেড় বিঘা জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের নেতৃত্বে যুবলীগের ২০-২৫ জন কর্মী একটি ক্ষেতের ধান কাটছেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে মানিক রায়, আরিফ দেওয়ান, শুভ, সাজ্জাদ, এরশাদ, হৃদয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মাঠেই কথা হয় কৃষক হারুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রশাসনের নির্দেশে দূরের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অন্য জেলা থেকে এবার এলাকায় খুব কম ধান কাটা শ্রমিক এসেছে। তাই মাঠের ধান পেকে গেলেও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছিলাম না। উপায়ান্তর না পেয়ে যুবলীগের ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা ধান কেটে দেওয়ায় মজুরি লাগল না। আমার অনেক উপকার হলো।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায় জানান, চলমান সংকটময় মুহূর্তে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুমে বাইরের জেলা থেকে নওগাঁয় কৃষিশ্রমিক তেমন আসতে না পারায় কৃষিশ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় খরচ পড়ছে বেশি। তাই অনেক দরিদ্র চাষি পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছে না। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় ধানাকাটার জন্য যুবলীগ ১০০টি কমিটি গঠন করেছে। চাষিরা ফোন করলেই কমিটির সদস্যরা ধান কেটে ও মাড়াই করে কৃষকদের ঘরে তুলে দিচ্ছে।

বিমান রায় আরও বলেন, গত ২৪ এপ্রিল সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে এক কৃষকের এক বিঘা জমির ধান কাটার মধ্য দিয়ে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত পুরো জেলায় গঠিত ১০০টি কমিটির যুবলীগকর্মীরা অন্তত দেড়শ কৃষকের ২০০ বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছে। পুরো মৌসুমই আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।

এদিকে যুবলীগের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও কৃষকরা। নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা কায়েস উদ্দিন বলেন, অসহায় কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ার যুবলীগের এই উদ্যোগ জেলাজুড়ে ব্যাপক সারা ফেলেছে। ধান পাকার পর থেকে প্রতিদিনই তারা জেলার কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন শ্রমিক সংকটে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা কেটে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিনা খরচে ধান ঘরে উঠায় দরিদ্র চাষিরা উপকৃত হচ্ছে। প্রতিটি কাজে যুবকরা এভাবে এগিয়ে এলে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যুবলীগের মতো অন্যান্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসা উচিত।