নওগাঁয় দালাল ছাড়াই মিলছে পাসপোর্ট
নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে বর্তমানে অনেকটা ভোগান্তি আর হয়রানি ছাড়াই সেবা মিলছে। দালালদের দৌরাত্ম নেই বললেই চলে। দালাল ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সরাসরি কর্মকর্তার কাছ থেকে পাসপোর্ট বিষয়ে সেবা নিতে পারছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
জেলার রাণীনগর উপজেলার কাটরাসইন গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে যে আমার পাসপোর্ট অনেক আগেই তৈরি হয়ে অফিসে জমা রয়েছে। সেই পাসপোর্ট দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়েছে।’
একই গ্রামের আরেক সেবাগ্রহিতা রণজিত শাহা বলেন, ‘আমার আগের পাসপোর্টের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কিছু তথ্যগত অমিল ছিল। দালাল ছাড়াই আমি অফিসের সহকারী পরিচালক স্যারের কাছে বিষয়টি জানালে তিনি আমার সব সমস্যা সমাধান করে দ্রুত আমার নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছেন। আমি স্যারের ব্যবহারে অভিভূত হয়েছি। এমন কর্মকর্তা যদি দেশের প্রতিটি সরকারি অফিসে থাকত তাহলে আমাদের দেশের চিত্র অনেক আগেই বদলে যেত।’
নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিস নিয়ে দেশের মানুষের মাঝে যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নিয়েছে, তা থেকে কিছুটা ইতিবাচক ধারণার অবতারণা করতে আমি এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই চেষ্টা করে আসছি। গ্রহণ করেছি কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। যেমন যে সব গ্রাহক দীর্ঘদিন তাঁদের পাসপোর্ট গ্রহণ করছেন না, তাদের একটি তালিকা করেছি। সেই তালিকা অনুসারে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের গ্রাহকদের নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে তাদের প্রস্তুত হওয়া পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে লিখিত ভাবে চিঠির মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করেছি। চলতি হজ মৌসুমে যেসব মানুষ হজে যেতে পাসপোর্ট করতে এসেছেন, তাঁদের সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া অসুস্থ ও বয়স্কদের পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আসছি। প্রতিদিন অফিস শুরুর সময় থেকে অফিস শেষ হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মানুষের জন্য আমার কক্ষের দুয়ার সব সময় খোলা রাখি—যেন সমাজের নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের যেকোনো মানুষ আমার দপ্তর থেকে কোনো ধরনের ভোগান্তি আর হয়রানি ছাড়াই সেবা নিতে পারে।’
সহকারী পরিচালক আরও বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত কোনো দালাল নেই। অফিসের বাইরে অনেক কথিত ব্যক্তি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষদের নানা চক্রের ফাঁদে ফেলছে। তারা নিজেদের নানাভাবে জাহির করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে আসছে। আর এসব মানুষের ফাঁদে পড়ে অনেক অসচেতন মানুষ অযথাই ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু যারা সচেতন মানুষ তারা কিন্তু কনো সমস্যা হলেই সরাসরি আমার কাছে চলে আসছেন। আমি সব সময় আমার অফিসের স্টাফদের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে অনন্ত অফিসের অভ্যন্তরীণ পরিবেশটি দালালমুক্ত রাখার চেষ্টা করে আসছি। এই সেবাগুলো আরও উন্নতভাবে দেওয়া সম্ভব হতো যদি পর্যাপ্ত জনবল থাকত। অনেক সময় একজন মানুষকে পাঁচ জন মানুষের কাজ একাই করতে হয়। এ ছাড়া অফিসে পর্যাপ্ত জনবল থাকলে প্রতিটি মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যে উন্নতমানের সেবা দেওয়া যেমন সম্ভব হতো, তেমনি দালাল শব্দটিও এই অফিস চত্বর থেকে বিদায় নিত।’
সহকারী পরিচালক আরও বলেন, ‘আমার অফিসে সেবা নিতে এসে যদি কেউ কোনো স্টাফের কাছ থেকে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার পেয়ে থাকেন কিংবা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি ওই স্টাফের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে জনবল সংকট থাকায় অনেক সময় অনবরত সেবা দিতে গিয়ে বিরক্তির কারণে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে যেতে পারে। তাই অফিস স্টাফদের সেই ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিয়ে উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অফিসে সেবা নিতে আসা প্রতিটি সেবা গ্রহিতাকে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাই এই অফিসে সেবা নিতে আসা প্রতিটি মানুষের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ কামনা করছি। নওগাঁবাসীর সার্বিক সহযোগিতা পেলে আমি এই পাসপোর্ট অফিসে ব্যতিক্রমী সেবা দেওয়ার ধারাবাহিকতার মধ্যদিয়ে একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ রেখে যেতে চাই। অফিস কিন্তু নওগাঁতেই থাকবে আর আমি নির্ধারিত সময় পর চলে যাব অন্যত্র। কিন্তু সবার কাছ থেকে গঠনমূলক সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে আমি এই অফিসে ভিন্নধর্মী এক রেওয়াজ চালু করে রেখে যেতে চাই। যার মাধ্যমে নওগাঁবাসী আজীবন সুন্দর সেবা নিতে পারেন।’