নাপা সিরাপে ক্ষতিকর কিছু পায়নি অধিদপ্তর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অস্বাভাবিক মৃত হওয়া দুই শিশুকে যে নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল সেই ব্যাচের সিরাপ ঝুঁকিমুক্ত ও মানসম্মত বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, এসব সিরাপে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।
আজ সোমবার বিকেলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ‘নাপা সিরাপে শিশুমৃত্যুর অভিযোগ’ প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘অভিযুক্ত দোকান থেকে নেওয়া বেক্সিমকোর নাপা সিরাপের তিনটি ব্যাচের আটটি নমুনার মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধের গুণগত মান সঠিক ছিল। আটটি বোতলের সবগুলোতেই ফল পজিটিভ এসেছে।’
শিশুদের খাওয়ানো সিরাপ নকল ছিল কি না, এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘দুই শিশু মারা যাওয়ার পর ব্যবহৃত ওষুধটি পুলিশের সিআইডিতে চলে গেছে। সেখানে ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন এলে জানা যাবে শিশুদের মৃত্যুর পেছনে ওই সিরাপের কোনো ভূমিকা ছিল কি না।’
মোহাম্মদ ইউসুফ আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে ওই ব্যাচের ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে বলা হয়। একই সঙ্গে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়। একটি কমিটি ঘটনাস্থলে অন্যটি বেক্সিমকোর কারখানায় যায়।’
এদিকে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘বেক্সিমকোর কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যা তারা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছে, ওই ব্যাচের নাপা সিরাপের মান সন্তোষজনক। মাঠ পর্যায়েও ওষুধটি নিয়ে আমাদের পরীক্ষা চলছে। এখন পর্যন্ত সেগুলোর ফল ঠিক আছে।’
এদিকে অদিদপ্তরটির একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র দাবি করেছে—বেক্সিমকোর যে ব্যাচের নাপা সিরাপ খেয়ে ওই দুই শিশু মারা গেছে বলা হচ্ছে, সেই একই ব্যাচের মোট ৮৫ হাজার বোতল ওষুধ ছিল বাজারে। যার অধিকাংশই এখন শেষ হয়ে গেছে। আর ওই ব্যাচের ওষুধে যদি কোনো সমস্যা থাকত, তাহলে অধিদপ্তর হয়তো সব ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিত। কারণ, ওষুধে সমস্যা থাকলে অনেক মানুষের প্রাণহানীর ভয় থাকত।’
গত ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামের দুই শিশু মারা যায়।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ‘ওষুধটিতে কী এমন উপাদান ছিল, যেটি খাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া করল, এটি আসলে রহস্যজনক বিষয়। এই রহস্য উদঘাটন করতে হয়তো সময় লাগবে।’
ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিতে ডা. আকিব হোসেনের সঙ্গে অধিদপ্তরের দুজন উপপরিচালক ও দুজন সহকারী পরিচালক এবং একজন পরিদর্শক আছেন।
ইয়াছিন ও মোরসালিন দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন ওরফে সুজন খানের ছেলে।
লিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলেন, ‘আপনার ছেলেরা সম্পূর্ণ সুস্থ। বাড়িতে নিয়ে টক আর পানি খাওয়ান বেশি করে।’ কিন্তু, বাড়িতে আনার পথেই আমার এক ছেলে মারা যায়। বাড়িতে এসে আরেকজনের মৃত্যু হয়।”