নারায়ণগঞ্জে ওসমানীয় রাজত্ব চলে, প্রশাসন কিছুই করে না : আইভি
নারায়ণগঞ্জ শহরে ওসমানীয় রাজত্ব চলে উল্লেখ করে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৩ জেলা চলে একভাবে আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এ রাজত্বে প্রশাসন কিছুই করে না। তারা গডফাদারদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে।’
আজ সোমবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১০ বছরপূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান ও শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এ কথা বলেন।
সরকারের কাছে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র আইভী বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে আসছি। আরও কত বছর এই বিচার চাইতে হবে জানি না। ঘাতকদের চিনি, তাদের গোষ্ঠী চিনি, বাড়ি চিনি। ছোট একটা বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত জানে কে ত্বকীকে হত্যা করেছে। তাহলে কেন তাদের বিচার হবে না, সেইটাই প্রশ্ন।’
ত্বকীর ঘাতকদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে আইভী বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার হবে, অবশ্যই হবে, হতেই হবে। আমি আমার সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, আপনি অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন—দয়া করে ত্বকী হত্যারও বিচার করেন। সারা দেশের মানুষ জানে কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। সুতরাং হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হোক।’
একাত্তরের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষকে ভয় দেখাতে, তাদের অন্ধকারে রাখতে একটি মহল হত্যার রাজনীতি করছে বলেও মন্তব্য করেন সিটি মেয়র।
আইভী আরও বলেন, ‘এই শহরকে ভূতের রাজ্য, সন্ত্রাসের রাজ্য বানানো হয়েছিল। এখন মানুষ জেগে উঠেছে। তারা প্রতিবাদ করে, খুনিকে খুনি বলতে পারে। ত্বকীকে আমরা হারিয়েছি কিন্তু ত্বকী আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাকি ৬৩ জেলা চলে একভাবে আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এ রাজত্বে প্রশাসন কিছুই করে না। তারা গডফাদারদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করে। প্রশাসনের লোকজন কার হুকুম পালন করতে নারায়ণগঞ্জে আসে, সরকারের নাকি স্থানীয় গডফাদারদের? এটা আমি এখনও বুঝতে পারি না। পুরা শহর ওসমানীয় সাম্রাজ্য হয়ে গেছে।’
এই শহর থেকে জুলুম শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ইতিহাস, ঐতিহ্যের শহর ছিল। কিন্তু এখন সারা দেশের মানুষ জানে, এই শহরে দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা আমরা পাল্টে দিতে চাই। তাদের পজেটিভ নারায়ণগঞ্জ উপহার দেব।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ থামব না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই হত্যার দাবি প্রবাহিত হবে। রাসেল হত্যার বিচার যেমন হয়েছে, এই হত্যার বিচারও একদিন হবে। দলের নাম করে পার পাওয়া যাবে না।’
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে এই সময় আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, সদস্য সচিব হালিম আজাদ, খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল।
এর আগে আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মোল্লাবাড়ি এলাকায় সিরাজ শাহের আস্তানায় ত্বকীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। পরে সেখানে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করা হয়।
বিকেলে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিশু-কিশোরদের মধ্যে উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫০০’ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সন্ধ্যায় তিন বিভাগ থেকে নির্বাচিত মোট ২৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।