নিম্নমানের কাজে বারবার ধসে যাচ্ছে মনপুরা রক্ষা বাঁধ

Looks like you've blocked notifications!

নিম্নমানের কাজ আর সঠিক তদারকির অভাবে বারবার ধসে যাচ্ছে ভোলার মনপুরা উপজেলা রক্ষায় নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আরও টেকসই কাজের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নতুন প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা। বারবার এমন হওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী। ঝুঁকির মধ্যে মনপুরা উপজেলা।

দ্বীপজেলা ভোলার আরেক দ্বীপ মনপুরা উপজেলা। প্রাচীনতম এ উপজেলার চারপাশই মেঘনা নদী বেষ্টিত। এক সময় পর্তুগিজরা এই উপজেলাকে বেছে নিয়ে তারা এখানে বসবাস করত। এটা ছিল তাদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান। বর্তমানে সেই প্রাচীন দ্বীপটি বিলীনের পথে। যে কারণে নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করাটাই এখানকার মানুষের প্রধান কাজ। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত মনপুরা রক্ষায় প্রায় ১২৫ কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও নদী ভাঙন রোধ প্রকল্প গ্রহণ করেন। তবে কাজের শুরু থেকেই নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ফরিদ, রিপন ও মো. ফিরোজ আলম বলেন, বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ, ব্লক ও জিও ব্যাগ কম ফেলা নিয়ে সোচ্চার এলাকাবাসী। তাঁরা আরো বলেন, কাজের মান খুবই খারাপ। শুরু থেকেই আমরা বাধা দিয়ে এলেও তারা আমাদের কথা শুনছে না। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। তারা মনপুরার উত্তর মাথার তুলাতলী নামকস্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং নদী ভাঙন রোধে ব্লক স্থাপনে চরম অনিয়ম করেই যাচ্ছে।

মনপুরায় মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ছবি : এনটিভি

স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে কাজ করা এবং পাউবো কর্মকর্তারা সব সময়ই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় কাজের গুণগত মান নিয়ে ক্ষোভ সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলে। যা নিয়ে একাধিক রিপোর্ট হয়েছে। রিপোর্ট হলে কিছু দায়সারা কাজ করেই শেষ।

এবার দেখা গেছে ধসে যাওয়া ব্লকের পাশেই মাটি কেটে ব্লক বসানো হচ্ছে। এসব অনিয়ম মানতে নারাজ পাউবো। তবে স্থানটি যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কাজের আগে নিরীক্ষার সময় যে ভুল হয়েছে, তা স্বীকার করে নিলেন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সুজন। তিনি বলেন, সঠিকভাবে নিরীক্ষা করে কাজ করলে এমনটা হতো না। যার উদাহরণ তিনি পাশের কাজগুলোর দিয়েছেন।

সঠিক কাজ করে ঐতিহ্যবাহী মনপুরাসহ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে রক্ষা করা হবে, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। না হলে আসন্ন বর্ষায় ঝুঁকিতে পড়বে উপজেলাটি।

স্থানটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কাজের জন্য আনা একটি বার্জ ডুবে যায়, যা আজও তোলা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ব্লক ও জিও ব্যাগ কম দেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছে স্থানীয়দের।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ নিরীক্ষায় ভুল ছিল তা সরাসরি স্বীকার না করলেও তিনি বলেন, এই স্থানটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। না হলে একই সঙ্গে আরো দুটি কাজ হয়েছে, সেখানে এত সমস্যা না হলেও এখানে কেন হচ্ছে?

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এই জায়গায় আরও শক্তিশালী ডিজাইন আমরা লিখেছিলাম। তাঁরাও সেটা দিয়েছেন। আরও শক্তিশালী করার জন্য একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেটা পাস হলেই আরও বেশি মালামাল দিয়ে আমরা স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ শক্তিশালী করতে পারব।

তবে স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষের দাবি, সরকার শত শত কোটি টাকা দিয়েছে নদী ভাঙন রোধে। আর সেগুলো সঠিক তদারকির অভাবে যদি নিম্নমানের কাজ হয়, তাহলে ক্ষতি এলাকার। যে কারণে সঠিকভাবে যাতে কাজ হয়, তার তদারকির দাবি সবার।