নির্দেশ অমান্য করে খুলছে পাবিপ্রবি, নেপথ্যে কী

Looks like you've blocked notifications!
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ইউজিসি তথা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আগামীকাল রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আপত্তি উপেক্ষা করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সিদ্ধান্তে এবং নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার ব্রহ্ম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, জুন ফাইনাল সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধশত কোটি টাকা ছাড় করাতেই তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও ডিসট্যান্স ক্লাস ছাড়া যাবতীয় কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। গত ২৮ মে ইউজিসি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

পাবিপ্রবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বিজয় কুমার ব্রহ্ম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি। ছবি : এনটিভি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

পাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জীবাণুনাশক টানেল কিংবা স্বাস্থ্যবিধির কোনো প্রস্তুতি না নিয়েই হঠাৎ করেই রোববার (৩১ মে) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রশাসন। আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্য মহোদয়কে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তিনি তা মানছেন না। এমন সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবন করোনার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, সংক্রমণ প্রতিরোধে হাজী দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ জুন পর্যন্ত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। পাবিপ্রবিতে কী এমন বিশেষ প্রয়োজন পড়ল তা খতিয়ে দেখলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে প্রশাসনের একগুঁয়েমির কারণ জানা যাবে। মূলত জুন ফাইনালে অর্ধশত কোটি টাকা ছাড় করতেই এ ধরনের আয়োজন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৬০ কোটি টাকা চলতি অর্থ বছরে ছাড় হয়েছে। যার মাত্র পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জুন ফাইনালের মধ্যে বাকি টাকা বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে খরচ করতেই সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার বলেন, ‘ভিসি স্যারের নির্দেশে আমি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নোটিশ করেছি। ইউজিসির সিদ্ধান্ত অমান্য হয়েছে কি না, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলী বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যে নির্দেশনা বা চিঠি দিয়েছে তা সঠিক হয়নি। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও সীমিত পরিসরে খুলছে। জরুরি কিছু প্রশাসনিক কাজ থাকায় ‘সীমিত’ পরিসরে অফিস খোলা হচ্ছে।’

উন্নয়ন প্রকল্পের অব্যবহৃত ৬০ কোটি টাকা খরচ করতেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে কি না প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য ‘এত টাকা তো বরাদ্দই হয়নি’ বলে এড়িয়ে যান।

প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা শুধু তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানিয়েছি। নির্দেশনা না মেনে পাবিপ্রবি খোলা হলে তা সেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অবজ্ঞা ও অমান্য করার শামিল। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার পাবিপ্রবি প্রশাসনের নেই।’