নির্বাচনের নামে তামাশার ধিক্কার জানাই : প্রিন্স
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, আজ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের নামে তামাশা করা হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনতাই করা হয়েছে। ঐসব এলাকার জনগণ ঘৃণাভরে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রিন্স বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সীমিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোট উৎসব সৃষ্টি করে নির্বাচনকে স্বার্থক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ব্যর্থ, অযোগ্য, ফ্যাসিস্ট সরকার তার আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এই নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা নির্বাচনের নামে তামাশা, প্রহসনের তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে পুনরায় নির্বাচন দাবি করছি।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আপনারা জানেন, আজ দেশের ছয়টি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, একটি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন, চারটি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন এবং ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
‘গত ৭ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিং করে আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে এসব নির্বাচনের হাল-হকিকত জানিয়েছিলাম এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলাম।
একই বিষয়ে নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ৮ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনের বরাবর সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের ভোটাধিকারের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তারা তা করে নাই। বরং তাদের র্নিলিপ্ততা, অধিকাংশ জায়গায় তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরো বেপরোয়া হয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে। গত রাত থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সন্ত্রাস চালিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে ভীতিকর এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। আজ সারা দিন, বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সারা দেশে এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আজ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা দখল করে নেয়। প্রশাসনের সহযোগিতায় অবাধে নৌকা মার্কায় সিল মারে আওয়ামী নেতাকর্মীরা। এই নির্বাচনে সাত দিন ধরে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা নিজেরাই সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহণে আগুন দিয়ে সেই ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করে বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে এলাকা ছাড়া করে।
ফরিদপুর সদর পৌরসভায় ধানের শীষের সব এজেন্টকে বের করে দিয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে সাধারণ ভোটারদের এবং ধানের শীষের প্রার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এতে দিনকাল পত্রিকার সাংবাদিক নুরুল ইসলামসহ অসংখ্য সাংবাদিকদকে আহত করা হয়। ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ভোটকেন্দ্রে সাধারণ ভোটাররা প্রবেশ করা মাত্রই সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তাদের ভোট নিজেরাই দিয়ে দেয়। সারা দিনই ভোটকেন্দ্রের সামনে পৌর এলাকার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের এনে জমায়েত করে সাধারণ ভোটার ও বিএনপির সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়।
বিএনপি অভিযোগ করে, মধুখালী পৌরসভায় আজ দুপুরের পর থেকে সব ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর নৌকা প্রর্তীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে আজ সকাল ৯টার মধ্যে ধানের শীষ প্রার্থীর বাড়ির আশপাশের তিনটি ভোটকেন্দ্র বাদে বাকি সব কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্ট এবং সমর্থকদের মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা অব্যাহত রয়েছে। এই উপজেলা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টসহ ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। গুরুত্বর আহত কয়েকজনকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
বিএনপির প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়, পাবনার ঈশ্বরদী ও বেড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উপনির্বাচনে আজ সকাল ৯টার মধ্যে সব ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের সব এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগকর্মীদের বাইরের এলাকা থেকে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের দেখানো হয় ভুয়া ভোটার লাইন। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রই দখলে নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলে। গতকাল দিনের বেলা থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা ফাটিয়ে নৈরাজ্য ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। সারা দিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে রাখে।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন, বন্ধবেড় ইউনিয়ন ও চর শৈলমারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের আগের দিন রাতেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা সব ভোট কেন্দ্র তাদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গোতাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আজ সব ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষ এজেন্টদের বের করে দেয় এবং নৌকা প্রতীকের লোকজনদের দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে লাইন ধরিয়ে রাখে কিন্তু ভেতরে নিজেরাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেয় বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূইয়া, ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল প্রমুখ।