নীল আকাশে ‘সবুজের’ উড়োজাহাজ

Looks like you've blocked notifications!
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর গ্রামে নিজের তৈরি উড়োজাহাজ ওড়াচ্ছেন সবুজ সর্দার। ছবি : এনটিভি

সুবিশাল নীল আকাশ। সে আকাশে উড়ছে কর্কশিটে তৈরি উড়োজাহাজ। ছোট্ট তার ডানা। রয়েছে রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও। সে রিমোটে নিয়ন্ত্রিত হয়েই উড়ে বেড়াচ্ছে এদিক-সেদিক। উড়োজাহাজটির উড়ে চলা উপভোগ করছেন গ্রামবাসী। উড়োজাহাজটি তৈরি করেছেন দিনাজপুরের এক যুবক—সবুজ সর্দার। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেকেই দিচ্ছেন উৎসাহ।

সদ্য স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া সবুজের বয়স ১৮ বছর। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর গ্রামে জন্ম।

আকাশে উড়োজাহাজ ওড়া দেখে সবুজের মনেও কৌতুহল জাগে। ইচ্ছে জাগে উড়োজাহাজ বানানোর। কিন্তু, গরিবের সংসারে জন্ম তাঁর। বাবা একরামুল সর্দার পেশায় ভ্যানচালক। মা শেফালী বেগম গৃহিনী। জমাতে থাকেন টিফিনের টাকা। পাশাপাশি মোবাইল রিপিয়ার করে রোজগারের টাকাও বাঁচাতে থাকেন। সঙ্গে চলে পড়ালেখাও। তারপর একদিন স্বপ্নে দাঁড়প্রান্তে পৌঁছান তিনি। বানিয়ে ফেলেন উড়োজাহাজ। এরই মধ্যে এসএসসি পাস করেছেন সবুজ ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে।

সবুজ জানান, ছোটবেলা থেকেই পরিত্যক্ত খেলনা সামগ্রীর যন্ত্রাংশ দিয়ে নানা রকম ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ তৈরি করতেন তিনি। এবার বিমান তৈরিতে সময় লেগেছে ৪৫ দিন। খরচ খুব কম যে, তাও নয়। খরচ হয়েছে মোট ১২ হাজার টাকা। যদিও কর্কশিটে তৈরি হয়েছে মূল কাঠামো। সবুজের উড়োজাহাজটি ৩০ মিনিট উড়ে বেড়াতে সক্ষম।

নিজেদের গ্রামে এমন একটি উড়োজাহাজ উড়তে দেখে গ্রামবাসীরও কৌতুহলের শেষ নেই। গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদা বেগম ও আতিকুর রহমান জানান, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সবুজ সংসারের অভাবের ঘোচাতে মোবাইল মেরামতের কাজ করতেন। মেকানিক্যাল বুদ্ধিতে তিনি সব সময় ছোটখাটো কিছু না কিছু করতেন। বর্তমানে তাঁর তৈরি উড়োজাহাজটি আকাশ উড়ছে। তাঁদের বিশ্বাস—আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেন তিনি।

ছেলের কর্মকাণ্ডে প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও এখন আনন্দ পান সবুজের বাবা একরামুল সর্দার ও মা শেফালী বেগম। তাঁরা জানান, অভাবের সংসারে দরিদ্র বাবাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পাঠকপাড়া বাজারের একটি দোকানে মোবাইল মেরামতের কাজ করত সবুজ। টিফিনের ও রোজগারের টাকা জমিয়ে অনলাইন থেকে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ কিনে উড়োজাহাজটি বানিয়েছে সে।

সবুজের তৈরি উড়োজাহাজ আকাশে উড়ছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, ‘সবুজ এখন সবার কাছে এখন অনুকরণীয়। বাবা-মা হিসেবে আমাদের গর্বের শেষ নেই।

সবুজ বলেন, ‘ছোট থেকেই উড়োজাহাজের প্রতি আগ্রহ কাজ করত। আমি চেষ্টা করতাম, পরিত্যক্ত জিনিসপত্র দিয়ে কিছু না কিছু তৈরি করার। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অনলাইনে অর্ডার দিয়ে উড়োজাহাজটি তৈরি করেছি। যা তৈরিতে সময় লেগেছে ৪৫ দিন। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এক বার চার্জ দিলে উড়োজাহাজটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত উড়ত সক্ষম।’

সফলভাবে উড়োজাহাজটি তৈরির পর সবুজ এখন একটি ড্রোন বানাতে চান। কৃষিকাজে সহজে কীটনাশক প্রয়োগে ভূমিকা রাখতে পারে এমন ড্রোন তৈরি করে তিনি গ্রামীণ কৃষিতে ভূমিকা রাখতে চান। তবে এ প্রযুক্তি তৈরি বেশ ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সবুজের উড়োজাহাজ দেখে আনন্দ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিয়াজ উদ্দিন। সবুজের এমন সফলতার প্রশংসা করে তিনি জানান, সহযোগিতা পেলে সে বিজ্ঞানে বেশ ভূমিকা রাখবে। সবুজকে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে সার্বিক  সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।