নুর-রাশেদ-ফারুককে বাদ দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের একাংশের কমিটি

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশ। ছবি : এনটিভি

সংগঠনের শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এনে তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশ। তাঁরা নিজেদের সংস্কারপন্থি হিসেবে তুলে ধরে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ২২ জন সদস্য রয়েছেন। কমিটির নতুন আহ্বায়ক হয়েছেন এ পি এম সোহেল। তিনি আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ও ফারুক হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সংগঠনটির একাংশ। সংস্কারপন্থিরা তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি, ত্রাণের অর্থ নয়ছয় করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ এনেছেন।

সংস্কারপন্থিদের নতুন কমিটির আহ্বায়ক এ পি এম সোহেল অভিযোগ করেন, নিজেদের সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য ছাড়া বাকিদের মতামত অগ্রাহ্য করে পরিষদকে স্বৈরতান্ত্রিক সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। সাধারণ ছাত্র অধিকারের জন্য এ সংগঠন গড়ে তুলে নুর ও তাঁর সহযোগীরা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন।

সোহেল বলেন, ‘নুর, রাশেদ ও ফারুক প্রবাসীদের অর্থ, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় সংগ্রহ করা অর্থ এবং করোনার ত্রাণের অর্থ নিয়ে নয়ছয় করেছেন। আর্থিক অসচ্ছলতা ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগে এই তিনজনকে সংগঠন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।’

এ পি এম সোহেল আরো বলেন, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ অনুষ্ঠানে সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়। এর বিরোধিতা করেছিলাম আমরা। ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে তাড়াহুড়ো করে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে অঙ্গসংগঠন তৈরি করা হয়। এসব সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমাদের অজানা। ফলে সংগঠনের চাপা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশের কমিটির আহ্বায়ক আরো বলেন, ‘একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন কারণে তরুণদের রাজনীতি বিমুখতায় তারুণ্যনির্ভর এই দলের আত্মপ্রকাশ প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু গণমানুষের কথা বলে আবেগকে পুঁজি করে, মুখোশ পরে আছে ভয়ংকর কিছু সত্য, সংগঠনের প্রায় সবাই জানে, কিন্তু প্রকাশ করে না।’

এ সময় কমিটির সদস্য সচিব ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাট বলেন, এর ভয়াবহতা এতটাই প্রকট যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলাকে রাজনীতিকীকরণ করে ভিকটিমকে নোংরাভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যেখানে সংগঠনের ৮০ ভাগ সহযোদ্ধা এ বিষয়ে জানে। এই মামলাটা তখনই রাজনৈতিক মামলা হতো, যদি সংগঠনের সবাই আগে থেকে না জানত।’

নতুন এই কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাটের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তাঁকে বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অনেক আগেই এ পি এম সোহেলকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর যাঁরা এই সংগঠনে আছেন, তাঁরা সংগঠনের কেউ নন। তাঁরা পুরোনো নাম ব্যবহার করেছেন। এতে কোনো মাথাব্যথা নেই।’

অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে রাশেদ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে যাঁরা আছেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা ভূমিকা রেখেছি। রাশেদ-নুর-ফারুক সংগঠনে আছে, থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো ভাঙন সৃষ্টি হবে না।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে সরকার সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাদ দেয়। সংগঠনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ নামকরণ করা হয়।