নুহাশপল্লীতে জাদুঘর নির্মাণ : ‘পরিবারের সবার অনুমতি প্রয়োজন’

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেহের আফরোজ শাওন। ছবি : এনটিভি

বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে গাজীপুরে নুহাশপল্লীতে পাঠকপ্রিয় এ লেখককে স্মরণ করলেন তাঁর স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। তবে করোনাকালের বাস্তবতায় এবার হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা হলো অনাড়ম্বর আয়োজনে।

এর মধ্যেই নুহাশপল্লীতে দেখা গেল হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওনকে। কথা বললেন সাংবাদিকদের সঙ্গেও। নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের সমাধির পাশে জাদুঘর নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শাওন।

এ প্রসঙ্গে শাওন বললেন, ‘শুরুতেই বলতে হবে আমি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, প্রথমত, হাসপাতালের জন্য নয়, আমি বলব জাদুঘরের জন্য। প্রথমত, হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত হিসেবে, দ্বিতীয়ত, পরিবারের একজন হিসেবে আমার খুব ইচ্ছা ছিল এবং এখনো প্রবল ইচ্ছা আছে যে হুমায়ূন আহমেদ যেখানে আছেন, সেখানে আমরা একটি জাদুঘর করতে চাই। আমরা জায়গাটাও ঠিক করেছি, সমাধির একদম পাশেই।’

কিন্তু নুহাশপল্লীতে জাদুঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কথাও উল্লেখ করেছেন শাওন। জানিয়েছেন, জাদুঘর করতে হলে প্রয়োজন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুমতি। কিন্তু সে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে একত্র করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

শাওন বলেন, ‘নুহাশপল্লী একটি পারিবারিক সম্পদ। পারিবারিক সম্পত্তিতে এ রকম কিছু একটা করতে গেলে পরিবারের প্রতিটি মানুষেরই আসলে অনুমতির প্রয়োজন আছে। ওই জায়গাটিতে আমি এখনো অপারগ হয়ে আছি। আমারই ব্যর্থতা, এখনো আমি সবাইকে একত্র করতে পারিনি।

এর আগে আজ সকালে দুই ছেলে নিনিত ও নিষাদকে নিয়ে কবর জিয়ারত করেন মেহের আফরোজ শাওন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

তবে প্রতিবারই সকাল থেকে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার ও ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। নন্দিত এ লেখকের উপন্যাসের চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে‌ রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকরা। তবে এবার করোনা ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা থাকায় দূরদূরান্তের লেখক-ভক্তরা নুহাশপল্লীতে আসতে পারেননি।

দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগে ২০১২ সালের আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। পরে তাঁকে নুহাশপল্লীতে সমাহিত করা হয়।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই খ্যাতি লাভ করেন তিনি।

বাংলাদেশে পাঠকপ্রিয় এ লেখক দুই শতাধিক ফিকশন ও নন-ফিকশন বই লিখেছেন। হিমু, মিসির আলির মতো চরিত্র দিয়ে লাখো-কোটি পাঠক-ভক্ত তৈরি করেছেন এই কথার জাদুকর। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো একুশে বইমেলায় সর্বাধিক বিক্রি হতো।

হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অন্যতম গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।

বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ুন আহমেদকে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক দেওয়া হয়।

নব্বই দশকের শুরুতে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে হুমায়ূন আহমেদের। নিজের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূনের পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদকে স্মরণ করছেন তাঁর অগণিত ভক্ত।