নূর-রাশেদের দ্বন্দ্ব, ছাত্র অধিকার পরিষদে ভাঙনের শঙ্কা

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর (বায়ে) এবং সংগঠনটির বর্তমান আহবায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ফাইল ছবি 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং সংগঠনটির বর্তমান আহবায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এতে করে সংগঠনটির মধ্যে ভাঙন ও বিভেদ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, নিজেকে তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ক দাবি করে নুর ছাত্র অধিকার পরিষদের দায়িত্বে থাকা রাশেদকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে,  ‘সমন্বয়ক’ নামে সংগঠনে কোনো পদবি নেই দাবি করে নুরের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন রাশেদ খান।

আজ রোববার ভোর ৩টার দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহার করে নুরুল হক নুর একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ বিষয়ে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন রাশেদ।

 এর আগে রাত ১টায় নুর তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি বিলুপ্ত করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের যৌথ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব বাছাই ও কমিটি গঠনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

কমিশনকে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব বাছাই ও কমিটি গঠনে নির্দেশনা প্রদান করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। কমিটি গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু হানিফকে।

এর তিন ঘণ্টা পর নুর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন৷

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ মিটিংয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ এর আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেনকে সাময়িক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।”

একই সঙ্গে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে তদন্ত কমিটির কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে আব্দুজ জাহেরকে।

 একই সময়ে পাল্টা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন রাশেদ খান। এতে বলা হয়, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যেখানে কোনো ‘সমন্বয়ক’ পদবি নেই, সেখানে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ নামে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।

একই সঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের সব বিশ্ববিদ্যালয়-জেলা-মহানগর ও উপজেলা কমিটিকে বিভ্রান্ত না হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান জানান রাশেদ।

এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে রাশেদ খান বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত করতে নূরের কোনো অধিকার নেই। আমাকেও বহিষ্কার করার এখতিয়ার তিনি রাখেন না। আমরাই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে দীর্ঘদিন ধরে একটি সংগঠন চালাতে গেলে নানা ধরনের মনোমালিন্য হয়। আমাদেরও সেটি হয়েছে। এখন ঠিক হয়ে গেছে৷’

এ বিষয়ে নুরুল হক নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। তবে প্রথমে নতুন কমিটির ব্যাপারে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি সেটি ঠিক আছে। এই কমিটি না হওয়া পর্যন্ত রাশেদ খান কমিটিতে থাকবেন।’

নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা

জুলাই মাসের মধ্যে অথবা তার কিছু সময় দেরি হলেও দ্রুত নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে কোটা আন্দোলনকারীদের এই প্ল্যাটফর্ম। এর আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের পর তারা যুব, শ্রমিক ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ গঠন করে। এসব সংগঠনগুলোর সঙ্গে যেহেতু অধিকার শব্দটি জড়িত আছে সেজন্য তারা নতুন রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে ‘অধিকার’ শব্দ যুক্ত করা হবে বলেও জানান নেতারা।