নেত্রকোনায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে।
গতকাল রোববার পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে জেলার সোমেশ্বরী, উদ্ধাখালী, কংস, ধনুসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ ও অভ্যন্তরীণ সড়ক পানি তোড়ে ভেঙে ও ডুবে গেছে। ওইসব এলাকার মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দুর্গাপুর, বারহাট্টা, কলমাকান্দায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
এদিকে জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও নেতাই নদীর পানি বেড়ে গাওকান্দিয়া কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পূর্বধলার জারিয়া, ধলামূলগাঁও ইউনিয়নে কংস, ধলাই নদীর পানি বেড়ে কমপক্ষে ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার, সদর উপজেলার কংস নদীর পানি বেড়ে কালিয়ারা গাবরাগাতী, ঠাকুরাকোনা ও বাংলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাঁচ শতাধিক মানুষ, বারহাট্টার ফকিরের বাজার, লামারপাড়া, সাহতা, রায়পুরসহ ১০টি গ্রামে হাজারের অধিক মানুষ এবং কলমাকান্দার উদ্ধাখালী ও মহাদেও নদীর পানি বেড়ে উপজেলার বড়খাপন, পোগলা, কৈলাটী, নাজিরপুর, কলমাকান্দা সদরের প্রায় ২০টি গ্রামে দুই হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ওইসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষকে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশে পানি থাকায় মানুষ বের হতে পারছে না। ছোট ডিঙি নৌকা ও কলাগাছের ভেলা দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পুকুর ও ফিসারি ডুবে মাছ ভেসে গেছে।
পূর্বধলার জারিয়া, ধলামূলগাঁও, সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা, দুর্গাপুরের কাকৈরগড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির চারপাশে পানি। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক, বীজতলা। পুকুর ও ফিসারি ডুবে গেছে। ছোট ডিঙি নৌকা ও কলাগাছের ভেলা দিয়ে আবার কেউ কোমড় পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে।
দুর্গাপুরের কাকৈরগড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৩৫টি গ্রামের মধ্যে কমপক্ষে ২৫টি গ্রামে পানি ডুকেছে। ওইসব গ্রামে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। কমপক্ষে ১৫০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ডুবে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। গত শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পিআইও সাহেব এলাকায় এসে কিছু শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য দিয়ে গেছেন।
জেলার পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের দিউপাড়া গ্রামের সাবেক ছাত্রনেতা রেজুয়ানুর রহমান রনি বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে ভবানীপুর, এরোয়ারচর, চুরেরভিটা, পাটলীসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। ওইসব গ্রামে এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।’
সদর উপজেলার বাংলা ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামের সমাজসেবক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘কয়দিনের ভারি বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি ডুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে পুকুর, বীজতলা ও চলাচলের সড়ক। একে তো করোনার বিধিনিষেধ তার ওপর পানির এই অবস্থা। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি।’
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, ‘উপজেলার কাকৈরগড়া, গাঁওকান্দিয়া, বিরিশিরিসহ চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যনরা দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ওই সমস্ত গ্রামে পানিবন্দি কিছু মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।’