নড়াইলের মহাশ্মশানে মৃতদেহ সৎকারে জনদুর্ভোগ চরমে

Looks like you've blocked notifications!
নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের বন খলিশাখালি গ্রামের ডঙ্করের বিলের মাঝখানে মহাশ্মশান। ছবি : এনটিভি

নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মরদেহ সৎকার করতে যেতে হয় নাওসোনা মহাশ্মশানে। বর্ষাকালে কলাগাছের ভেলায়, কেউ নৌকায়, কেউ তালের ডোঙায়, আবার অনেকে ঘাড়ে করে কোমরপানি ভেঙে অবর্ণনীয় কষ্ট করে শ্মশানটিতে যেতে হয় মৃতদেহ সৎকারে। এটি ইউনিয়নের বন খলিশাখালি গ্রামের ডঙ্করের বিলের মাঝখানে অবস্থিত।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের সামর্থ নেই তাদের অনেকেই বর্ষা মওসুমে বিলের কচুরির ধাপের তলে স্বজনদের মরদেহ ফেলে রেখে আসে। দুর্ভোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসী মহাশশ্মানে যাতায়াতের জন্য পথ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হেমায়েত হোসাইন ফারুক হিন্দু সম্প্রদায় মানুষদের এই দুর্ভোগ নিরসনে নাওসোনা মহাশ্মশানে সৎকারের সুব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকসহ প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। দক্ষিণে লনার ফুলতলা,পশ্চিমে যশোরের অভয়নগর, পূর্বপাশে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সীমানা। ১২টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন গঠিত। প্রায় ৪০ হাজার পরিবার এখানে বসবাস করে।

বিছালী ইউনিয়নের বনখলিশাখালি, রুন্দিয়া, আটঘড়িয়া, আকবপুর, রুখালি, চাকই, মধুরগাতি, আড়পাড়া, কালিনগর, বিছালী এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন নাওসোনা মহাশ্মশান। সংস্কারের অভাবে শ্মশানটি এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। শ্মশানে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে মরদেহ সৎকারে দুর্ভোগে পড়তে হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের। বিছালী-আগদিয়াচর সড়কের বনখলিশাখালি সেতু থেকে শ্মশানের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। সেতুর নিচ দিয়ে হাজামজা একটি খাল। খালটি বনজঙ্গলে ভরা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের বেশিরভাগ অংশ প্রায় সারা বছরই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। একটি উঁচু ভিটার ওপর শ্মশানটি। সেখানে কালীমন্দির, মন্দিরের সামনে একটি মজা পুকুর, একটি নলকুপ, উত্তর পাশে তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি পাকা ঘর থাকলেও ঘরটি আগাছায় ছেয়ে গেছে। সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা নেই।

বনখলিশাখালি গ্রামের শিবাজি কুমার বিশ্বাস (৩৫) বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের নৌকা-ডোঙা কিছুই নেই। গত বর্ষায় আমার পিসিমা আলো বিশ্বাস মারা যান। পিসিমার মরদেহ ঘাড়ে নিয়ে বুক জল ভেঙে শ্মশানে নেওয়ার চেষ্টা করি। কষ্ট হয়ে গেলে খালের কচুরি ধাপের তলে পিসিমাকে ডুবিয়ে দিয়ে আসি।’

বিছালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য অসিম বিশ্বাস বলেন, ‘বিছালী-আগদিয়ারচর সড়কের বন খলিশাখালি সেতু থেকে শ্মশানের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। একজন মৃত ব্যক্তির সৎকার করতে আশপাশের ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।’

বনখলিশাখালি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শচীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমি মারা গেলে আমারে কীভাবে শ্মশানে নেবে জানি না। অনেককে শ্মশানে নিতে না পারায় খালের কচুরির ধাপের তলে ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

আটঘড়িয়া গ্রামের ফাল্গুনি রায় (৭৮) হরিমতি বিশ্বাস (৮২) বলেন, রাস্তা না থাকায় আমরা শ্মশান বা কালীমন্দিরে আসতে পারি না।

শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘বিছালী ইউনিয়নের রুন্দিয়া মৌজার খাস খতিয়ানের ২৫ শতক এবং কেনা ৬৪ শতক জমির ওপর মহাশ্মশানে স্থাপিত। সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্রনাথ সাহা শ্মশানে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ঘর করে দেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘরটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন জনদুর্ভোগের কথা আগে শুনিনি। আমি নিজেই ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করব। ওই মহাশ্মশানে এলাকার মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে প্রাথমিক পর্যায়ে টিআর-কাবিখার সহায়তা প্রদান করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। পরে ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’