পঞ্চম বাংলাদেশ-জাপান যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ
পঞ্চম বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভার্চুয়ালি এ সংলাপ হয়।
সংলাপে ঢাকা প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংলাপে অংশ নেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানরা। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, জেবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।
টোকিও প্রান্তে জাপান থেকে অংশগ্রহণকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হিরাই হিরোহাইদ। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেসিসিআই) প্রতিনিধি, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের চেয়ারম্যান, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জাইকা, জেট্রোর বাংলাদেশ অফিসের প্রধানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।
এবারের সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃষিপণ্যের ব্যবসা ও লজিস্টিক খাতের বিভিন্ন নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা সম্পর্কিত সরকারি উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে এসব খাতে জাপানি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা নিয়ে দুটি প্রেজেন্টেশন হয়।
এছাড়া উভয়পক্ষ বাংলাদেশে জাপানিজ বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় জিটুজি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকনোমিক জোনের কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। এ সময় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জাপানি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সংলাপে বাংলাদেশে বিদ্যমান জাপানের বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে দেশটির সরকারি ও বেসরকারি পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
এদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে আশ্বস্ত করা হয়। একইসঙ্গে ইতোপূর্বে জাপানি বিনিয়োগকারীরা যেসব বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গৃহীত কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতেও এ অগ্রগতি অবাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করবে বলে আশা প্রকাশ করে উভয়পক্ষ। পরে পঞ্চম বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।