পদ্মায় নৌদুর্ঘটনা : ২৬ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ী ঘাটসংলগ্ন এলাকায় গতকাল সোমবার সকালে বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরই মধ্যে উদ্ধার হওয়া সব মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া পাঁচজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ওই স্পিডবোটের চালকও রয়েছেন। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, লাশ দাফন-কাফনের জন্য নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. রহিমা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরই মধ্যে এই দুর্ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কাঁঠালবাড়ী নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল ৬টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে একটি স্পিডবোট ৩১ জন যাত্রী নিয়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। স্পিডবোটটি শিবচরের কাঁঠালবারী (পুরাতন ফেরিঘাট) ঘাটের কাছে এলে পদ্মা নদীতে থাকা একটি বাল্কহেডের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে স্পিডবোটটি উল্টে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। এ সময় স্পিডবোটে থাকা যাত্রীরা ডুবে যান।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট শংকরদির পাড় গ্রামের তারা মিয়া বয়াতীর ছেলে আবু তাহের বয়াতী, সদর উপজেলার পশ্চিম চৌহদ্দি কলাগাছিয়া গ্রামের সুখদেব বাড়ৈর মেয়ে কলাগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া বাড়ৈ, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরের আবুল হোসেনের ছেলে কাউছার, চাঁদপুর মতলব থানাধীন মোহনপুর গ্রামের আলী হোসেন, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ছাদেক বেপারীর ছেলে রিয়াজউদ্দিন, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আরজু সরদার ও তাঁর ছেলে ইয়ামিন। এরই মধ্যে নিহত ২৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মাদারীপুরের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে গতকাল সোমবার ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া তিন সদস্যের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌমন্ত্রণালয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেছেন, ‘স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত পাঁচজন শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে স্পিডবোটের চালক রয়েছেন। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সুস্থ হলে আমরা তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’