পবিত্র আশুরা পালিত
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিতে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হয়।
এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।
বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালিত হয়। এ উপলক্ষে পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
করোনা মহামারির কারণে ছোট পরিসরে হয়েছে আশুরার তাজিয়া মিছিল। হোসেনি দালান ইমাম বাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে সকাল ১০টায় বের হয় মহররমের এই শোকের মিছিল। তবে সে মিছিল হোসেনি দালান ইমাম বাড়া প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভক্তরা ভোর থেকেই রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়াতে আসতে থাকেন । ইমামবাড়ার উত্তর দিকের প্রধান ফটকে দুটি ও দক্ষিণের গেটে দুটি করোনা প্রতিরোধক জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়।
ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল এখানে প্রায় ৪০০ বছর ধরে হয়ে আসছে। এ বছর করোনার কারণে তা সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, ইমামবাড়া প্রাঙ্গণে আগতদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) পবিত্র আশুরা পালন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সব ধরনের তাজিয়া, শোক ও পাইক মিছিল নিষিদ্ধ করে। তবে ধর্মপ্রাণ নগরবাসী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইমাম বাড়াগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি দেয় ডিএমপি।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক আজ বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করেছে।
এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গূরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সময় জাতীয় মসজিদে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়।
আলোচনা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক জিলানী। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার, আনিছুর রহমান সরকার, উপ-পরিচালক আলমগীর হায়দার, মুফতি আব্দুল্লাহসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।