পর্যটক টানছে সাদা মাটির পাহাড়

প্রকৃতি তার অকৃত্রিম সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে নদী ও সাদামাটির পাহাড়ের গায়ে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝিরি-ঝরনাময় সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি এনেছে নান্দনিকতা। ভারতীয় মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের একটি ভূখণ্ডের দৃশ্য এমন।
নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সাদা মাটির পাহাড় ও সোমেশ্বরী নদীর কথা বলছি।
দুর্গাপুর উপজেলার ‘বিজয়পুরের সাদামাটি’ ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃত। এই স্বীকৃতি এ অঞ্চলকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ২০১৭ সালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মূল্যবান ও দুর্লভ খনিজ সম্পদ হিসেবে পরিচিত বিজয়পুরের সাদামাটিকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়ায় আবেদন জানান। এ জন্য তিনি পেটেন্ট ও ডিজাইন ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) প্রস্তাবনা জমা দেন। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর চলতি বছর পণ্যটির স্বীকৃতি মিলে।
বিজয়পুরের সাদামাটি খনিজ প্রকল্প এলাকায় পাহাড়ি টিলা কেটে অনেক গভীর থেকে এ মাটি তোলা হতো। পাশাপাশি সেখানে কালো, খয়েরি, বেগুনী ও নীলসহ আরও কয়েক রঙের মাটির স্তর রয়েছে। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ থাকলেও আগে খনন করা এলাকাগুলোতে গেলে নানা রঙের মাটির স্তর এখনও দেখা যায়। যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

খনন এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে নীল পানির লেকে। লেকগুলো স্বচ্ছ ও সুদৃশ্য। প্রতিদিনই এখানে দূর-দূরান্তের অগণিত পর্যটক ভিড় করে। করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে পর্যটকদের আনাগোনা কম ছিল। তবে বর্তমানে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে।
দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি আর সাদামাটির পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সোমেশ্বরী নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাগমারা বাজার হয়ে স্থানীয় রানীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোনো মৌসুমে সোমেশ্বরীতে পানি প্রবাহ তেমন থাকে না। এই নদীর পানিতে নেমে পায়ে বালির স্পর্শ যেন অন্যরকম অনুভূতি।
শহুরে ইট-পাথরের চার দেয়ালে বসবাসরত মানুষটিকে রঙিন করে তুলতে পারে এ নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। আর সাদা মাটির পাহাড়ের নীল পানি যেন প্রকৃতির সোভা।
দুর্গাপুরের রাস্তাঘাট আগের তুলনায় অনেকটা উন্নত হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এ ছাড়া বিরিশিরি এলাকায় রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি ও আদিবাসী জাদুঘর।
গাজীপুর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সেলিম খান বলেন, ‘আগের তুলনায় রাস্তা অনেক ভালো হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে বেড়াতে পারলাম। দূর্গাপুর ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যাদের সাদামাটির পাহাড়, নদীর স্বচ্ছ পানি ও ঝরনা ভালো লাগে তাঁরা অবশ্যই নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আসতে পারেন।’

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব-উল-আহসান বলেন, ‘আজ সোমবার বিশ্ব পর্যটন দিবস। অত্র এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। আগের তুলনায় এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত হওয়ায় পর্যটকদের কাছে দুর্গাপুরের কদর বেড়েছে। কোভিট-১৯ প্রাদুর্ভাব কম থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা যেন এলাকাটি দেখতে পারেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি সাদামাটির নিরাপত্তায় বিজিবি ও পুলিশকে বিশেষ নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘দুর্গাপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ওই এলাকাকে আরও আকর্ষণীয় করতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে পর্যটক আরও বাড়বে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই সাদামাটি এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের একটি স্বকীয় পণ্য হিসেবে পরিচিতি পাবে।’