পাবনার সেই ওসি প্রত্যাহার, মিষ্টি বিতরণ

Looks like you've blocked notifications!
আমিনপুর থানার ওসি এস এম মাঈনুদ্দিনকে (ইনসেটে) প্রত্যাহারের ঘটনায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়। ছবি : এনটিভি

পাবনার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈনুদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে।

আজ  রোববার সকালে পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম ওসি মাঈনুদ্দিনকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্তির আদেশ দেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার মিলি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, ওসি মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বেড়া উপজেলার চার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কলরেকর্ড ফাঁস করে বেড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল বাতেন ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের হাতে তুলে দেওয়া, ঘুষ নিয়ে ভিজিডি কার্ডের চাল চুরি অভিযোগে অভিযুক্ত ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলীর পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া, চরমপন্থী ও সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া, কাজীরহাট ও নগরবাড়ী ঘাটে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার জানান, রোববার সকালে ওসি মাঈনুদ্দিনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পাবনা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে রাজি হননি তিনি।

এর আগে, ওসি এস এম মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতা চার ইউপি চেয়ারম্যানের তিন মাসের ফোনালাপের কললিস্ট অর্থের বিনিময়ে ফাঁসের অভিযোগ করেন পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, মাসুমদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেন, নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ রফিকুল্লাহ এবং রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জ্বল।

এমন অভিযোগ তুলে গত ২ জুন তাঁরা স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পাবনার জেলা প্রশাসকের কাছে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে লিখিত আবেদন জানান। অভিযোগ তদন্তে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসকে (বর্তমানে ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়। পরবর্তী সময়ে সে তদন্ত প্রতিবেদন বিস্তারিত প্রকাশ করেনি জেলা পুলিশ।

এ ছাড়া, গত ১৩ এপ্রিল পাবনার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী ২২৯ বস্তা ভিজিডি চাল চুরির অভিযোগে আটক হলেও ঘুষের বিনিময়ে তাঁর পক্ষে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আমিনপুর থানার ওসি এস এম মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে।

জিজ্ঞাসাবাদে চাল চুরির বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় র‌্যাব-১২-এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে ওই রাতেই আমিনপুর থানায় মামলা করেন। পরে, অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে, গত ১৯ মে চাঞ্চল্যকর এই মামলাকে ‘তথ্যগত’ ভুল দাবি করে র‍্যাবের অভিযোগকে অসত্য বলে কোরবান আলী সরদারকে অব্যাহতি দিয়ে তড়িঘড়ি করে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আমিনপুর থানা পুলিশ। ওসি মাঈনুদ্দিন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কোরবান আলীকে খালাস দেওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশও করেন। পুলিশের এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে অভিযানের সত্যতার বিষয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপনের কথা জানান র‍্যাব-১২-এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম। র‍্যাব-পুলিশের এমন পরস্পর বিরোধী অবস্থানের বিষয়ে সে সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ওসি মাঈনুদ্দিন বহাল ছিলেন।

রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জ্বল জানান, দীর্ঘ দুই মাসেও ওসি মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা পুলিশ। নিজের ক্ষমতার দম্ভোক্তি করে কিছুই হবে না বলে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন। কাজীরহাট ঘাটে চাঁদার টাকা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও ওঠে নৌপরিবহন ব্যবসাও বন্ধ করে দেওয়ার। রোববার এই বিতর্কিত ওসির অব্যাহতির খবরে স্থানীয়রা মিষ্টিও বিতরণ করে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর ও পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা।