পাবনায় পরকীরার জেরে হত্যাকাণ্ড : গ্রেপ্তার দম্পতির জবানবন্দি

Looks like you've blocked notifications!
পরকীয়ার জেরে পাবনার আলোচিত শাহজাহান হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী যুথী। ছবি : এনটিভি

পরকীয়ার কারণে পাবনার আলোচিত শাহজাহান হত্যাকাণ্ডে জড়িত দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল সোমবার রাতে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. যুথী আক্তার ওরফে আদুরীকে (২৮) পলাতক অবস্থায় ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন উত্তর গাজীরচট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

পিবিআই জানায়, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে শালগাড়িয়া শাপলা প্লাটিক এলাকার শাহজাহান আলী (৪০) নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন গত ১ এপ্রিল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। এরপর গত ৫ এপ্রিল দুপুরে বস্তাবন্দি একটি লাশ আটঘরিয়ার গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মো. কাশেমের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সংবাদ পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন লাশটি শাহজাহানের বলে দাবি করে। এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই মো. আব্দুল গফুর একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু কিনারা না পাওয়ায় মামলাটির তদন্তে জেলা পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

পাবনা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহীর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করেন।

জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সবুজ আলী বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরকীয়ার জের ধরে মামলার ভিকটিম শাহজাহান আলীর সঙ্গে মোছা. যুথী আক্তার ওরফে আদুরীর সম্পর্কের টানাপোড়ন চলতে থাকে। আসামি আদুরী তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকতেন তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করেন। ওই বাসার ভাড়া উঠানোর দায়িত্ব ছিল ভিকটিম শাহাজাহানের ওপর। তাদের বাসাও ছিল পাশাপাশি। শাহজাহান ও যুথী মোবাইল ফোনে প্রায়ই কথা বলতেন। এক পর্যায়ে তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। শাহজাহান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। ভিকটিম শাহজাহান যুথীকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতে চাইতেন। কিন্তু যুথী এক পর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত ও অতিষ্ট হয়ে সব ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলেন। তখন যুথীর স্বামী ও নিজস্ব লোকজন শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। যুথীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শাহজাহানকে হত্যার জন্য ঘুমের ওষুধ কিনে যুথীকে দেন। যুথী শাহজাহানকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে আটঘরিয়ার গঙ্গারামপুর গ্রামে তার এক নিকটআত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে যুথী খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শাহজাহানকে খাওয়ান। এতে শাহজাহান আলী ঘুমিয়ে পড়েন। পরে যুথী, তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর এবং অন্য আসামিরা শাহজাহানের হাত-পা বেঁধে গলার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা লাশ গুম করার জন্য বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়ার গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মো. কাশেমের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে যুথী ও তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকায় পালিয়ে যান বলে জানান।

উল্লেখ্য, এ মামলায়  এর আগে গত ১২ এপ্রিল আসামি মো. ইব্রাহীম প্রামাণিককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। তিনিও নিজেকে শাহজাহান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী আরও বলেন, ‘আসামি যুথী আক্তার ওরফে আদুরী ও তাঁর স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহাজাহানকে সুকৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করেছেন।