পাবনায় ভিজিএফের তালিকায় পাকাবাড়ি ও দশবিঘা জমির মালিক!
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের ভিজিএফের তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তি, পাকাবাড়ি ও দশবিঘা জমির মালিক রয়েছেন। অথচ ঐ ইউনিয়নের অনেক দিনমজুর ও হতদরিদ্ররা রয়েছেন তালিকার বাইরে। এ নিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঈদুলফিতর উপলক্ষে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্রদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার তালিকা প্রণয়ন, বিতরণে অনিয়ম ও ভুয়া তালিকায় চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম কামালের বিরুদ্ধে। চাঁদভা ইউনিয়নে ভিজিএফের সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্বচ্ছল ব্যক্তি, পাকাবাড়ি ও দশবিঘা জমির মালিকও রয়েছেন। তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার উল্লেখ করে বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুলফিতর উপলক্ষে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার জন্য আটঘরিয়া উপজেলায় মোট ৯৪৭০টি কার্ড বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এর মধ্যে চাঁদভা ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ১৭১০টি কার্ডের বিপরীতে ১৭.১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ ছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, ভিজিএফ কার্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহার করা এবং ভিটেবাড়িবিহীনসহ ১২টি শর্তাদির চারটি পূরণ হলে এই তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে অস্বচ্ছল দিনমজুর ও ভিক্ষুকদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ভুয়া তালিকা করে চেয়ারম্যান চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
চাঁদভা ইউনিয়নের রিকশাচালক নওসাদ আলী বলেন, আমি দিন আনি দিন খাই। অথচ বার বার চেষ্টা করেও কার্ড পাইনি। চেয়ারম্যান ভুয়া নাম দিয়ে চাল তুলে নিচ্ছে। দ্যাশে দেহার কেউ নেই।
চাঁদভা ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান তাঁর খেয়াল খুশিমতো নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। তদন্ত করলেই সঠিক তথ্য বেড়িয়ে আসবে। সরকার যে উদ্দেশ্যে এই ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে দুস্থদের সহায়তা করছেন, এই ইউনিয়নে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ধুলিসাৎ করছেন এই চেয়ারম্যান।
২০২২ সালের ঈদুলফিতর উপলক্ষে চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ ভাতাভোগীদের নামের তালিকাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম দুই পাতায় ৫২ জনের নামের তালিকা করা হয়েছে। সেখানে ২৮ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারীর নাম রয়েছে। অথচ দুর্যোগে ব্যবস্থাপনা শাখার নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, ৭০ ভাগ নারীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ওই তালিকার প্রথম পাতায় ০১৭১৬৩২৯৮৪৬ মুঠোফোনের নম্বরটি দশ জনের নামের পাশে দেওয়া আছে। আবার ৩৩১১২৩৭৭৫৮ এই এনআইডি নম্বরটি দ্বৈতভাবে দেওয়া আছে। এরকম একাধিক এনআইডি নম্বর বার বার ব্যবহার করে অন্যের নামের পাশে দিয়ে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশে চাল আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক নয়। তালিকায় কাদের নাম আছে সেটাও দেখার দায়িত্ব আমার না। সেখানে ট্যাগ অফিসাররা আছেন, তারা উপস্থিত থেকে বিতরণ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করে সরাসরি দেখা করে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান তৌহিদুল ইসলাম।
চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, দ্রুততার সাথে তালিকাটি করা হয়েছে। তাই ভুলত্রুটি হতেই পারে। আর কাজ করতে গেলে ভুল হবেই। ভুল ত্রুটি হলেও চাল আত্মসাত করা হয়নি।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, এ রকম একটি অভিযোগ আমি শুনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, চাঁদভা ইউনিয়নে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তালিকা প্রস্তুতের কাজ করে থাকেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একই ব্যক্তির নাম বার বার উল্লেখ করা, স্বচ্ছল ব্যক্তির নামে কার্ড ইস্যু হলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।