পাবনায় ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু, পলাতক চিকিৎসক

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার সাঁথিয়া থানা। ছবি : সংগৃহীত

পাবনার সাঁথিয়ায় চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে শ্যামলী খাতুন (২৩) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ভুল অপারেশনে নবজাতক গুরুতর আহত হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় বিষয়টি ৫ লাখ টাকায় আপস মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা সদরের রুবিয়া ফয়েজ ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসক আব্দুর রহিম পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলার তেঁতুলতলা স্বরূপ গ্রামের দিনমজুর খাইরুল ইসলামের স্ত্রী শ্যামলী খাতুন (২৩) প্রসব বেদনা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১টায় সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে রুবিয়া ফয়েজ ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালের দালালরা তাকে ফুঁসলিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। শুক্রবার সকাল ৯টায় ক্লিনিক মালিক ডা. আব্দুর রহিম নিজেই রোগীকে (অ্যানেস্থেশিয়া) অজ্ঞান করে সিজার করেন। এতে অধিক রক্তক্ষরণে অপারেশনের টেবিলেই শ্যামলীর মৃত্যু ঘটে। এ সময় নবজাতকের দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরির আঘাত লাগে। পরে রোগীর স্বামীকে ডেকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পোস্টমর্টেম না করেই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীর মৃতদেহ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নিহতের স্বামী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করে মেরে ফেলেছেন। এটা তার তৃতীয় বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। আগের দুটি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। এটাও নরমাল হবে। তাই উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু রুবিয়া ফয়েজের দালালরা ফুঁসলিয়ে এনে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।’

খাইরুল আরও বলেন, ‘এখন তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি গরিব মানুষ। আমি কি করবো। আছরের নামাজের পর আমি স্ত্রীকে দাফন করেছি’।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তা ছাড়া ইউএনও সাহেব বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা হয়ে গেছে। ভিকিটিমকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছে। তাই আমরা ব্যবস্থা নেইনি এবং পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফনের অনুমতি দিয়েছি।

এ ব্যাপারে রুবিয়া ফয়েজ ক্লিনিকের মালিক ডা. আব্দুর রহিমের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

অপর একটি সূত্র জানায়, এর আগেও ডা. রহিমের ভুল অপারেশনে ৫ জন রোগী মারা গেছে। কিন্তু তার কিছু হয়নি। এবারের প্রসূতি শ্যামলী মারা যাওয়ার পর ইউএনওর মধ্যস্থতায় নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউএনও বলেছেন, কোনো আপস মীমাংসা করা হয়নি। ভিকটিমের স্বামী আপত্তি না করায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।