পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কার দোষে নিষ্পাপ শিশুর অঙ্গহানি?
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভুল ইনজেকশন প্রয়োগ ও চিকিৎসার অবহেলায় শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী শিশুর বাবা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ পাবনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমার এক বছর বয়সী শিশু মো. তাসিম মোল্লা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১০ জুন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া (উদরাময়) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১২ জুন সকালে ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তব্যরত নার্স আমার শিশুকে ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশনটি রগে (রক্তনালীতে) প্রয়োগ না করে নার্স মাংসপেশিতে ভুলে প্রয়োগ করে। ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই শিশুর ডান হাত ফুলতে থাকে এবং শিশুটি ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। শিশুর ব্যথা ও কান্নার কারণে কর্তব্যরত নার্সদেরকে বারবার দেখালে তিনি বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। ইনজেকশন পুশ করার স্থানে (ডান হাত) ক্রমান্বয়ে লাল-বেগুণি বর্ণ ধারণ করে এবং শিশুটি অনবরত ব্যথার যন্ত্রণায় কাঁদতে ও ছটফট করতে থাকে। আমার স্ত্রী বার বার নার্সদের ডেকে দেখালে তারা বলেন, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। তৎকালীন কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে তিনি ক্ষত স্থানে বরফ দিতে এবং নাপা সিরাপ খাওয়াতে বলেন।
১৩ জুন হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে তিনি প্রেসক্রিপশনে একটি মলম লিখে দেন এবং লাগাতে বলেন। ১৪ জুন তারিখে কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে তিনি শিশু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন। শিশুর অনবরত কান্নায় আমরা বারবার কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের শরণাপন্ন হচ্ছিলাম। তারা সবাই ঠিক হয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেন। ১৮ জুন কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার শিশুকে রক্ত দিতে বলেন। আমরা শিশুটিকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে রাত ১২টার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করি।
৪ জুলাই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরের কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে সে সময় তার কক্ষে থাকা কর্মকর্তারা আমাকে পুলিশের ভয় দেখান এবং হাসপাতালে রোগী ভর্তির ফরমের মূল কপি রেখে ফটোকপি দেন। এ সময় শিশুকে ইউরো মেডিক্যালের কনসালটেন্ট ডা. জাহেদী হাসান রুমীকে দেখাতে বলেন। আমি শিশুকে ডা. জাহেদী হাসান রুমীর চেম্বারে দেখালে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। আমরা ৬ জুলাই শিশুকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ পঙ্গু হাসপাতালে দেখালে সার্জারির মাধ্যমে ডান হাতের তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে বলেন। পরবর্তীতে ২৯ জুলাই পাবনার শিমলা হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তিনটি আঙুল কেটে ফেলা হয়।
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ আরও বলেন, শুধু আমার সন্তানই নয়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলায় এরকম অসংখ্য রোগী দুর্ভোগ ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কেউ তার কাছে অভিযোগ করেননি। শিশুটির অঙ্গহানির জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।