পার পেয়েই যাচ্ছিল কিশোরীর ‘ধর্ষকেরা’

Looks like you've blocked notifications!
টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজন। ছবি : সংগৃহীত

১৬-১৭ বছরের এক কিশোরী। খুব ছোটবেলায় মা মারা যান। পরে বাবা আবার বিয়ে করেন। কিন্তু বাবার ঠিকানায় ঠাঁই হয়নি মেয়েটির। কিশোরী ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় থাকে দাদির সঙ্গে। অনেক কষ্টে চলে দাদির সংসার।

সেই কিশোরীর এক বান্ধবী থাকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায়। সেই বান্ধবী কিশোরীকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। আর্থিক সংকটের কারণে সাত-পাঁচ না ভেবেই চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে কিশোরী। আর তার মধ্যেই পথে কিশোরীর সঙ্গে ঘটে বর্বরতম ঘটনা, কয়েক দুর্বৃত্ত মিলে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এটি ৬ মে ঘটনা। ১২ মে পুলিশ ঘটনাটি অন্য একজনের মাধ্যমে জানতে পারে। 

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশ জানায়, করোনাকালের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ব্যবস্থা নেই। ফলে কিশোরীকে ভেঙে ভেঙে সিরাজগঞ্জের পথে যেতে হয়। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। একাকী কী করবে, কোথায় যাবে; ভেবে পাচ্ছিল না মেয়েটি। রেলস্টেশনে একা দাঁড়িয়ে থাকে। খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায় অথবা নিরাপদে রাতটা পার করার কোনো আশ্রয়।

এ সময় স্টেশনের পাশে এক লেগুনাচালক এগিয়ে আসে কিশোরীর দিকে। তাকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পথে চালকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন যুবক। তারা মেয়েটিকে নিয়ে হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে চলে যায়। সেখানে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যায় টেনে-হিঁচড়ে। তাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। ভোরের দিকে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়। অসুস্থ শরীরে মেয়েটি চলে যায় কোথাও।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিশোরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্বর এ ঘটনাটি জেনেছেন এক ভদ্রলোক। তিনি পথে কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানেন। সে সময় কিশোরী ভয়ে কাঁপছিল। কারো কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতা ছিল না তার। তার ধারণা, ধর্ষকরা আবারও তাকে খুঁজে বের করবে। তার উপর নির্যাতন করবে। মেয়েটিকে দীর্ঘক্ষণ অনুসরণ করতে পারেননি ভদ্রলোক।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি হয়তো ওখানেই শেষ হতো। নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরীর কথা জানত না কেউ কোনোদিন। নিপীড়নের যাতনা আর ভয় একাকী বয়ে বেড়াত মেয়েটি। কিন্তু ওই ভদ্রলোক পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের ফেসবুকে বার্তা পাঠান ১২ মে।

বার্তাটি কালিহাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলমকে পাঠিয়ে দ্রুত তদন্ত করে কিশোরী ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। কালিহাতির ওসির তৎপরতায় পরিদর্শক (তদন্ত) রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম তদন্তে নামে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পান তাঁরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁরা অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটিকে শনাক্ত করেন। দাদির ঠিকানা খুঁজে পায় পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায় তাকে। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে করে তাকে কালিহাতি আনা হয়। তাকে অভয় দেওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার। মেয়েটির বর্ণনা ও দেওয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।

গতকাল বুধবার রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির একটি পুনর্বাসনের জন্য পুলিশ চেষ্টাও করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সন্দেহভাজনরা হচ্ছেন মো. লালন, মো. রাসেল, মো. সুমন ও মো. রিপন। আসামিরা সব কালিহাতি উপজেলার সল্লা গ্রামের বাসিন্দা।