পাহাড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় আওয়ামী লীগ

Looks like you've blocked notifications!
রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন। ছবি : এনটিভি

পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর অবৈধ অস্ত্রধারীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা না গেলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারাবে এবং ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে জনগণ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ।

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারীদের তৎপরতা বন্ধ, প্রার্থীদের হত্যা ও অপহরণের অপচেষ্টা প্রতিহত এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে এই  সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা না গেলে সন্ত্রাসীরা আরও উৎসাহী হয়ে আগামী সব নির্বাচনে আগের মতো একই পন্থা প্রয়োগ করবে। এতে ব্যহত হবে গণতন্ত্র।’

দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, ‘শান্তিচুক্তি তোমরা বাস্তবায়ন চাও? বেছে বেছে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পক্ষের লোকজন হত্যা করে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, ‘চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করি আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযান আরও জোরদার হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে বিগত দু’এক বছর তাদের অপতৎপরতা অনেকটা সংকুচিত হলেও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা অধিক শক্তিশালী হয়ে আবার আমাদের নেতাকর্মী ও নিরীহ জনগণকে খুন, জখমের পাশাপাশি প্রাণ নাশের হুমকি, নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আতংক সৃষ্টি করে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’

ইউপি নির্বাচনের প্রত্যেক ধাপে ভোট কেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকাগুলোয় নিরাপত্তাবাহিনী বিশেষ করে সেনা বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবিও জানান দীপংকর তালুকদার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজি কামাল উদ্দিন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর প্রমুখ।

সজীব মেম্বার হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে সাফাই দীপংকরের

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাপ্তাইয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও ইউপি সদস্য সজিবুর রহমানকে (সজীব মেম্বার) ‘সম্ভবত হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।

কাপ্তাইয়ে নিজ দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত সজিবুর রহমানকে নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দীপংকর তালুকদার বলেন, ‌‘সজীবের ওপর যে আঘাত করা হয়েছে, যে আলামত আমরা যা দেখছি, সম্ভবত হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় নাই। ওকে ভীতি প্রদর্শন বা এ রকম কিছু করার জন্য আঘাত করা হয়েছে, সে আঘাত খুব খারাপ জায়গায় লেগেছিল বলেই সে মারা গেছে। আমার মনে হয় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় নাই। তারপরও যেহেতু সে মারা গেছে স্বাভাবিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটি তদন্ত করবে। আমরাও তদন্ত করছি এবং যদি আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা অবশ্যই নিব।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় নতুন বাজার এলাকায় কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জেরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং এ সময় ভারি কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করায় গুরুতর আহত হন সজিবুর রহমান ওরফে সজিব মেম্বার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সজীব কাপ্তাই ইউনিয়নের ৫ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। সজিব আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের সমর্থক। লতিফ এবার আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল।