পিলখানা হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় এ বছরই চায় বিএনপি
এক যুগ আগে বহুল আলোচিত ও নৃশংস পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের বিচারের চূড়ান্ত রায় এ বছরের মধ্যেই ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দ্বাদশ বার্ষিকীতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এই দাবি জানান।
এদিন বেলা পৌনে ১১টায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের নেতারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সলা করা সম্ভব হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের হতাশ করেছে, দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার অত্যন্ত শ্লথ গতিতে চলছে।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘এই বছরের মধ্যে লিভ টু আপিল এবং আপিলের কার্যক্রম শুরু হবে বলে এমন কোনো আশা, এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এ বছরের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সলা করা হবে, চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে বিদ্রোহে সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহে বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (তৎকালীল বিডিআর) নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সেনা কর্তৃপক্ষের একটি কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।
মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার এবং তদন্তপূর্ব সুষ্ঠু বিচার কামনা করি। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য। এর বেনিফিসিয়ারি কারা, সেটিও দেশবাসী পরিষ্কার জানতে চায়।’
মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘এরই মধ্যে নিম্ন বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে খালাস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, সবাইকে আনা হয়নি, কয়েকজনকে আনা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী, তারা এখন পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে রয়েছে। দেশবাসীর সামনে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাব, হত্যাকাণ্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহ, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’
মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সঙ্গে একজন সুবেদার মেজরের পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। আমি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, সেই শহীদ পরিবারগুলো কষ্টে মনোবেদনার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছে। তাদের এবং শহীদদের আত্মার শান্তির বিধান করার জন্যে দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা আশা করি।’
‘এ দেশে আমরা সুশাসন কামনা করি। এ দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে—এই কামনা করি’, যোগ করেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিও জানান।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মো. ইসহাক, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মণীষ দেওয়ান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হানিফ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সারোয়ার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাঈদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হাসান, বিএনপিনেতা শামীমুর রহমান শামীমুর, শাহ খালেদ হাসান চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।