পীরগঞ্জে হামলা : অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রলীগনেতা সৈকত ও সহযোগীর জবানবন্দি

Looks like you've blocked notifications!
রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতা সৈকত মণ্ডল ও তাঁর সহযোগী রবিউল ইসলাম আজ রোববার রংপুরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ছবি : এনটিভি

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ‌র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতা সৈকত মণ্ডল ও তাঁর সহযোগী রবিউল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিযেছেন।

আজ রোববার সন্ধ্যায় রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত-২-এর বিচারক দেলওয়ার হোসেনের আদালতে তারা এই জবানবন্দি দেন।

এর আগে সৈকত ও রবিউলকে পীরগঞ্জের ঘটনায় র‌্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। সেখানে ঘটনার আদ্যোপন্ত বর্ণনা দেন তারা।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে সৈকত ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সৈকত মণ্ডল ওই ঘটনার মূল হোতা।

এদিকে পীরগঞ্জের ঘটনায় তিন দিনের রিমান্ডে থাকা ৩৭ জনকে আজ আদালতে তোলা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। মোট তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সৈকত মণ্ডল কারমাইকেল কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ওই বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। পীরগঞ্জে হামলার ঘটনার পর নাম আসায় গত ১৮ অক্টোবর তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর আজ সন্ধ্যায় কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যায় রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শফিউর রহমান স্বাধীন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।

সৈকত ও রবিউলকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাবের ভাষ্য

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুর সংবাদ সম্মেলন করেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, “ফেসবুকে কাবা শরিফের অবমাননা করার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উসকানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিলেন পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক ছিল এবং তাদের নিজস্ব বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলে, ‘ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে!’ এরপর পোস্টটি সে ডিলিট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করে। এরপর সে পোস্টটি পিক করে সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে সেটি জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করে, হামলার নেতৃত্ব দেয় এবং নিজেও অংশ নেয়।’

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রবিউল ইসলাম পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। কিন্তু, ঘটনাস্থলের পাশের মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়। যে মসজিদের মুয়াজ্জিন নন রবিউল। কিন্তু, রবিউলই মাইকিং করেন এবং সৈকত মণ্ডলের নির্দেশে তিনি মাইকিং করে লোকজন জড়ো হতে আহ্বান জানান। পরবর্তী সময়ে রবিউল মাইকিংয়ের দায়িত্ব দেন তাঁর কাজিনকে। তারপর থেকে তাঁর কাজিন নিয়মিত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাইকিং করতে থাকেন। যদিও মাইকিংয়ে হামলা বা অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে কোনো কথা শোনা যায়নি বলে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’

ঠিক কী উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন সৈকত? জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তাঁর (সৈকত) ফেসবুক পেজে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ ফলোয়ার রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিলেন তিনি। হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলেও উসকানিমূলক পোস্ট দেন সৈকত মণ্ডল।’

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘সৈকত তাঁর একটি ফেসবুক পেজ চালান। সেখানেও তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি পড়েন এক কলেজে, তথ্য দিয়েছেন আরেক কলেজের। কোনো কোনো সময় তিনি নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করেছেন, কখনও আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজের পরিচয় করিয়েছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। সৈকত মণ্ডলও বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি একটি দুর্বল সময়ের জন্য সব সময় অপেক্ষা করেছেন। ফলে, কুমিল্লার ঘটনার পরও তিনি একের পর এক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি যে সরকারি কলেজে পড়েন, তাদের মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন এবং গ্রুপের মাধ্যমে সরাসরি হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে চক্রান্তকারীরা। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

র‍্যাব জানায়, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। উক্ত ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা করা হয়।