পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে আজ

Looks like you've blocked notifications!

দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-এফ’ নামের এ স্প্যানটি আজ বসানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

এরই মধ্যে গতকাল বুধবার দুপুরে স্প্যানটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছায় বলে নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের।

প্রকৌশলী বলেন, ‘এবার সেতুর দুই প্রান্তে জোড়া লাগার পালা। ৪১তম স্প্যান ‘টু-এফ’ নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছেছে। আজ সকালের দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু করা হবে। আর এতেই দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে এক নতুন মাইফলক রচিত হবে।’

৪১তম স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৪২টি পিলার সবকটি স্প্যান বহন করবে উল্লেখ করে দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘এরই মধ্যে ৪০টি স্প্যান বসে গেছে। এতে দৃশ্যমান হয়েছে ৬ কিলোমিটার। এদিকে জাজিরা প্রান্তে আগেই ২০টি স্প্যান বসানো হয়। আর মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ১৯টি স্প্যান। একটি স্প্যান বসানো হয় মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝখানে। একটি স্প্যান আজ বসানো হলেই পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে।’

দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-এফ’ নামের এ স্প্যানটি আজ বসানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ছবি : ফোকাস বাংলা

তিন বছর দুই মাস ১০ দিন

পদ্মা সেতুতে এই পর্যন্ত মোট ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে মাত্র একটি। এটি আজ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাহলে আজ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো স্প্যান বসানো সম্পন্ন হবে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। সে হিসাবে তিন বছর দুই মাস ১০ দিনে বসানো হবে সেতুর সব কয়টি স্প্যান। প্রথম স্প্যানের প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যান বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় ২৯ জুন পঞ্চম স্প্যানটি বসে। ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। এরপর বসানো হয় সপ্তম স্প্যান। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ওপর বসে অষ্টম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে ১০ এপ্রিল বসে দশম স্প্যান। ১৩ দিনের ব্যবধানে জাজিরা প্রান্তে ২৩ এপ্রিল স্থায়ীভাবে বসে একাদশ স্প্যান। ৬ মে দ্বাদশ, ২৫ মে ১৩তম, ২৯ জুন ১৪তম, ২২ অক্টোবর ১৫তম, ১৯ নভেম্বর ১৬তম, ২৬ নভেম্বর ১৭তম, ১১ ডিসেম্বর ১৮তম, ১৮ ডিসেম্বর ১৯তম ও ৩১ ডিসেম্বর ২০তম স্প্যান বসে।

এ ছাড়া চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ২১তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ২২তম, ২ ফেব্রুয়ারি ২৩তম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২৪তম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম, ১০ মার্চ ২৬তম, ২৮ মার্চ ২৭তম, ১১ এপ্রিল ২৮তম, ৪ মে ২৯তম, ৩০ মে ৩০তম ও ১০ জুন ৩১তম স্প্যান বসে।

এরপর বন্যার কারণে দীর্ঘ চার মাস পর ১১ অক্টোবর বসে ৩২তম স্প্যান। ১৯ অক্টোবর ৩৩তম, ২৫ অক্টোবর ৩৪তম, ৩১ অক্টোবর ৩৫তম, ৬ নভেম্বর ৩৬তম, ১২ নভেম্বর ৩৭তম, ২১ নভেম্বর ৩৮তম, ২৭ নভেম্বর ৩৯তম ও ৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানো হয়।

দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-এফ’ নামের এ স্প্যানটি আজ বসানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ছবি : ফোকাস বাংলা

পদ্মা সেতুর অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশের বেশি

পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশের বেশি। মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬৩ কোট টাকা। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য আট হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। সংযোগসড়ক ও সার্ভিস এরিয়াসমূহ সংযোগসড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতভাগ।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

আগামী ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘ইটস আ ইউনিক ব্রিজ ইন দি ওয়ার্ল্ড। এখানে রেলও চলবে, সড়কের যানবাহনও চলবে।’

গত সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।

দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-এফ’ নামের এ স্প্যানটি আজ বসানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ছবি : এনটিভি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লাস্ট স্প্যান ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে বসবে। সেতুতে ঢালাইয়ের কাজ, সড়কের জন্য প্রস্তুত করা, রেলের জন্য প্রস্তুত করার কাজ বাকি আছে। এটা ডাবল ডেকার সেতু। এখানে রেলও চলবে, সড়কের যানবাহনও চলবে। কাজে ওটাকে সেভাবেই তো তৈরি করতে হবে।’

সেতুতে কবে নাগাদ যানবাহন চলাচল করতে পারে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাজ শেষ হলে এরপর তো চালুই হয়ে যাবে। ১০ তারিখ যখন সব স্প্যান বসে যাবে তখন যে কাজ থাকবে তখন সেটা আমি ইঞ্জিনিয়ার, কনসালটেন্টদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি সেতু বিভাগে। তারা বলেছে ১০ মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে। তার পরই উন্মুক্ত হয়ে যাবে।’

আগামী বছরের বিজয় দিবসে এটি উদ্বোধন করা হবে কি না জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিবসে আমরা উদ্বোধন করব না। প্রাইম মিনিস্টার এটার বিরুদ্ধে। কোনো বিশেষ দিবসে এটা উদ্বোধন করা, এ জাতীয় প্রস্তাব তিনি কখনো গ্রহণ করেন না। বিশেষ দিবস তো বিশেষ দিবসই। এটা অন্য যেকোনো দিন হতে পারে। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে তো হওয়ার দরকার নেই।’

দেশের সবচেয়ে বড় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপরে যানবাহন চলবে। আর নিচে চলবে ট্রেন। স্প্যানের ওপরে সড়ক পথের জন্য দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব আর রেল চলার জন্য দুই হাজার ৯৫৯ রেলওয়ে স্ন্যাব বসবে। পুরোদমে চলছে এসব বসানোর কাজ। আর রেলওয়ে স্ল্যাবের সঙ্গে এক হাজার ৩১২টি লোহার গার্ডার বসছে। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সেতুর কাঠামো।