পুলিশকন্যা রুম্পাকে হত্যা নয়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন!
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে (২১) হত্যা করা হয়েছিল—এমন ধারণা ছিল পুলিশের। সে জন্য ঘটনার পর একটি হত্যা মামলাও করা হয়েছিল। তবে সুর পাল্টে ঠিক চার মাস পর পুলিশ বলছে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এই তথ্য জানিয়েছে।
ডিবি পুলিশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, ‘তবে রুম্পার আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে তাঁর প্রেমিক রাইমান সৈকতকে।’
রাজিব আল মাসুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর আয়েশা কমপ্লেক্সের পাশের গলি থেকে রুম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কমপ্লেক্সের ছাদের যে স্থান থেকে রুম্পাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে আমাদের ধারণা ছিল, ওই স্থানের ‘ফুটপ্রিন্ট’ পরীক্ষা করে রুম্পা ছাড়া অন্য কারো পায়ের সন্ধান মেলেনি। এ ছাড়া রুম্পার মরদেহ পাওয়ার পর ওই ভবনসহ আশপাশ এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই ফুটেজ বিশ্লেষণ ও আশপাশের আলামত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাঁকে হত্যা করা হয়নি। তিনি লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।’
রাজিব আল মাসুদ আরো বলেন, ‘রুম্পার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। রুম্পাকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন তথ্যও ওই প্রতিবেদনে আসেনি। মরদেহের ভিসেরা প্রতিবেদন এলে আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করব। অভিযোগপত্রে সৈকতকে আত্মহত্যার প্ররোচণার জন্য দায়ী করা হবে। যে ছাদ থেকে রুম্পা লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল, ওই ছাদের চারপাশে কোনো রেলিং না থাকায় ছাদটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যদিও এর আগে ওই ছাদে বান্ধবী সুলতানার সঙ্গে উঠেছিলেন রুম্পা। তবে ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রুম্পা কোথায় বা কার সঙ্গে ছিলেন, তার কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এই বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে।’
কেন সৈকতকে অভিযুক্ত করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে উপকমিশনার আরো বলেন, “ঘটনার পর আমরা রুম্পা ও সৈকতের ফেসবুক মেসেঞ্জার ও মুঠোফোনে নজর রেখেছিলাম। সেখানে এমন কিছু মেসেজ পাওয়া গেছে, যাতে সৈকতকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় দায়ী করা যায়। যেমন, রুম্পা সৈকতকে বলেছিল, ‘আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।’ এ ছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে, যেগুলো বলাটা শোভনীয় দেখাবে না। সৈকত তাঁর বাবা ও কাকার হত্যার পর থেকে রুম্পার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এর পর থেকে তাঁদের ভেতরে টানাপোড়েন চলছিল।”
রাইমান সৈকত স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর শান্তিনগরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে হলেও মালিবাগের শান্তিনগরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভাড়া বাসায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে হবিগঞ্জের একটি ফাঁড়িতে কাজ করেন। ঘটনার পরদিন রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের পরিদর্শক রোকন উদ্দিন ওই দিনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘রুম্পা প্রাইভেট পড়িয়ে বাসার নিচে এসে সন্ধ্যায় তার চাচাতো ভাইকে দিয়ে ফোন ও ব্যাগ বাসায় পাঠিয়ে দেয়। রুম্পা বাসায় না গিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও রুম্পার কাছের বন্ধু আবদুল্লাহ শাকিল গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, প্রায় এক বছর ধরে বিবিএ ডিপার্টমেন্টের রাইমান সৈকত নামের এক ছেলের সঙ্গে রুম্পার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিন মাস ধরে তাঁদের সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছিল না। রুম্পা সব সময় মন খারাপ করে থাকত। বলত, সৈকতের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলছে। আমরা ধারণা করছি, এ ঘটনার সঙ্গে ওই সম্পর্কের বিষয় জড়িত থাকতে পারে, আবার নাও পারে।’